হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও তা মানতে রাজি নন দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতার প্যাডে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের নিয়ম তুলে ধরে রওশন এরশাদ দাবি করেন, জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেয়া হয়নি। তাই জি এম কাদের এখনও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই আছেন।
তবে জি এম কাদের বলেছেন, এরশাদের ইচ্ছায় পার্টির নেতৃত্ব পেয়েছেন তিনি। তবে রওশন এরশাদের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বিজ্ঞপ্তিটি তিনি দেখেছেন বলেও জানান জি এম কাদের।
গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। এর চার দিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে রওশন এরশাদ ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সেদিন ওই ঘোষণা দিয়ে বলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদই এ সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এরপর গত শনিবার এরশাদের বড় ছেলে সাদ এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে গুলশান-২ নম্বরে ভাবি রওশনের বাসায় যান জি এম কাদের। রওশন সেদিন পার্টির নতুন চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে আশির্বাদ করেন বলে দলের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু দুই দিনের মাথায় রওশনের স্বাক্ষরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় উল্টো কথা।
এরশাদ জীবিত থাকাকালেই জাতীয় পার্টির পদ বণ্টন ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশনের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশ্য। অসুস্থ থাকা অবস্থায় এরশাদ গত এপ্রিলে তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। এর পর থেকে রওশন ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।
রওশন এরশাদের বিজ্ঞপ্তি:
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মারফত জানতে পেরেছি, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বপালনকালে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র ধারা ২০ (২) এর খ-এ দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। যথা- ‘মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন।’ চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০ (২) এর ‘ক’-কে উপেক্ষা করা যাবে না। আশা করি বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পার্টির অনেক সিনিয়ার নেতা রওশনের ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তাদের মধ্যে সাতজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দুইজন এমপির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ ফখরুল ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ সেলিম ওসমান, সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ নাসরিন জাহান রত্না, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, সাংসদ রওশন আরা মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রওশনপন্থী নেতা মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, হাতে লেখা বিজ্ঞপ্তি রওশন এরশাদের। আমরা অনেকে তাতে স্বাক্ষর করেছি।