ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ হবে আর চার বছর পর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই সুদীর্ঘ সময়ে মাত্র ৩৬ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন।
আর স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪৮ বছরে মাত্র ৬ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন। এরশাদের আমলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ ২৮ বছর স্থগিত থাকে ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ খ্যাত এ নির্বাচন। সৌভাগ্যের বিষয়, চলতি বছর এই মার্চ মাসেই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন, তফসিল ঘোষণা, বিভিন্ন প্যানেল থেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণাসহ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নির্বাচনে আসায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে গেছে। ছাত্রদল ও বাম দলগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও হলগুলোতেই হবে ভোট। যা হোক, ইতিমধ্যেই প্রচারণায় নেমে গেছেন প্রার্থীরা।
প্রতিশ্রুতি প্রদানে কোনো প্রার্থীই পিছিয়ে নেই। হলগুলোর আবাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধান, গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধ করা, রিডিংরুমগুলোর সংস্কার করা, হল ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নত করা, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন প্রার্থীরা।
প্রশ্ন হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান কি দু’-এক বছরে সম্ভব হবে? গেস্টরুমের নামে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন কি সহজে বন্ধ হবে? হলগুলোর আবাসন সংকট তীব্র। প্রতিটি হলে অনেকদিন ধরে অবৈধভাবে আবাসিক শিক্ষার্থীর মতো বসবাস করে আসছে অনেক শিক্ষার্থী।
তাদের কেউ হলের সাবেক পলিটিক্যাল বড় ভাই, কেউ পলিটিক্যাল বড় ভাইদের আত্মীয়, কেউবা চাকরিজীবী, আবার কেউ অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এ পটভূমিতে আবাসন সমস্যার সমাধানে ডাকসু নেতারা কী ভূমিকা পালন করেন সেটাই হবে দেখার বিষয়। ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণে তারা কী পদক্ষেপ নেবেন সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।
যেহেতু দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচন হয়নি, তাই দলীয় স্বার্থেই ছাত্রসংগঠনগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। মনোনয়ন প্রদানে তুলনামূলকভাবে কম পলিটিক্যাল, নন-পলিটিক্যাল শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এমন প্রার্থীও রয়েছেন যাদের সংশ্লিষ্ট হলেরই অনেকে চেনেন না। এমনটি হওয়ার কারণ কী? পাছে ছাত্রসংগঠনগুলো যাতে লাগাম না হারায় সে জন্য? বাম সংগঠনগুলোর দাবি- ডাকসুর ভোট একাডেমিক ভবনে হোক। এর আগের নির্বাচনগুলোয় হলে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
এবার কী এমন ঘটেছে যে একাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণ করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থী নেতাদের দূরত্ব কি এক-দুই বছরেই ঘুচবে? ক্যাম্পাসে বহিরাগতের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করাটা কি খুবই সহজ অথবা জটিল কোনো কাজ? ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণবিধি কবে জারি করা হবে?
দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ বাড়াতে ডাকসু নেতৃবৃন্দ কী পদক্ষেপ নেবেন? ফ্যাকাল্টিদের ইভিনিং ক্লাস প্রোগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কবে হবে? এরকম আরও অনেক প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন- ডাকসু নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে? নির্বাচিত প্রার্থীরা কি তাদের দলীয় স্বার্থেই কাজ করবেন? আসছে বছরগুলোতে কি নির্বাচন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে? দেখা যাক!
আহমেদ সজিব : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: যুগান্তর