ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু নাসের মো. সাইফের এক গবেষণা প্রবন্ধে পুরোটাই নকল করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেমের প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ হুবহু নকল করে প্রকাশ করেছেন।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক থাকাকালে মো. আবুল কাশেম, জহির উদ্দীন মো. বাবর ও আশরাফুল আলম বিশ্বাস যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব এমআইএস’এ ‘এম-ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ : কাস্টমার’স পারসেপশন অ্যান্ড এক্সেপশন’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি মূলত বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রকৃত অবস্থা, এ ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে গ্রাহকদের প্রেফারেন্স ও এক্সপেকটেশন যাচাই এবং এ ব্যাংকিং সেবার কার্যক্রম উন্নয়নে করণীয় পরামর্শ দিতে গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন।
কিন্তু ঠিক এর এক বছর পর ২০১৩ তে একই বিভাগের তৎকালীন প্রভাষক আবু নাসের মো. সাইফ ‘বাংলাভিশন রিসার্চ জার্নাল’ এ ‘এডপশন অব মোবাইল ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্ট’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। যেটি অধ্যাপক আবুল কাশেমের ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব এমআইএস’-এ প্রকাশিত ‘এম-ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ : কাস্টমার’স পারসেপশন অ্যান্ড এক্সেপশন’ থেকে ৯৯ শতাংশই নকল করা।
আবু নাসের মো. সাইফের গবেষণা প্রবন্ধটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- এটির সারাংশের ১৫ লাইনের মধ্যে ১০ লাইন, সূচনার ১৭ লাইনের মধ্যে ১৪ লাইন, গবেষণা মেথডলজি স্টাডির ৮ লাইনের মধ্যে ৭ লাইন, গবেষণা প্রশ্নের ৭টির মধ্যে ৫টি প্রশ্ন, রিসার্চ ভেরিয়েবল সম্পূর্ণ, লিটারেচার রিভিউর ৩১ লাইনের মধ্যে ৮ লাইন, সংগৃহীত ডাটা সম্পূর্ণ, ডিস্কাশন সম্পূর্ণ, উপসংহারের ৯ লাইনের মধ্যে ৭ লাইন এবং ৮টি রিকমেন্ডেশনের মধ্যে ৩টিরই আবুল কাশেমের গবেষণা প্রবন্ধের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক আবু নাসের মো. সাইফ বলেন, এ গবেষণা প্রবন্ধে প্রথম থেকেই আমি বাবর স্যারের সাথে কাজ করেছি। তাই আমি যখন এটা প্রকাশ করি তখন ধরেই নিয়েছিলাম যে এটা কোথাও প্রকাশ হবে না, আর হয়ওনি। যদিও এটা প্রকাশ করার সময় বাবর স্যারের সাথে আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রবন্ধ প্রকাশের অনেক পরে জানতে পারি যে এটা আগেও প্রকাশিত হয়েছে। তাই এ প্রকাশিত প্রবন্ধের রেফারেন্স আমি অন্য কোথাও ব্যবহার করিনি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তার জীবনবৃত্তান্তে ‘এডপশন অব মোবাইল ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্ট’ প্রবন্ধটি তিনি এককভাবে সম্পাদন ও প্রকাশ করেছেন বলে তথ্য দেয়া আছে।
এমআইএস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেমের কাছে তার গবেষণা নকল করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন সহযোগী অধ্যাপক ছিলাম তখন এটি প্রকাশ করেছি। এটা অন্য কেউ হুবহু নকল করেছে আজ জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, কেউ যদি অন্যের গবেষণা কপি করে তাহলে এটা অবশ্যই একাডেমিক করাপশন বলে গণ্য হবে। আর কারও বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।