প্রতি বছর নতুন বিভাগ খোলা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বাড়ানো, বিপুলসংখ্যক প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগ- সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেবরের দিক দিয়ে বিশাল আকার ধারণ করলেও শিক্ষার মান ও গবেষণার দিক দিয়ে কোন উন্নতি হয়নি বলে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মূলত শিক্ষা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গুণগতমানের দিক দিয়ে প্রত্যাশিত কোন উন্নতিই হয়নি। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, পড়াশোনা ও গবেষণার মান, উদ্ভাবন, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা, বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি পিছিয়ে রয়েছে। এসব কারণে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ে গবেষণাকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) সর্বশেষ র্যাংকিং অনুযায়ী- বিশ্বের ১ হাজার ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০ এর মধ্যে। ২০১২ সালেও ৬০১তম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এটি শুধু দুঃখজনক নয়, লজ্জারও বটে। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বর্তমানে সেই খেতাবটি আর নেই। প্রতি বছর নতুন বিভাগ খোলা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বাড়ানো এবং বিপুল প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বটে! কিন্তু শিক্ষার মান ও গবেষণার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না কেন, সেটাই প্রশ্ন? দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান এবং গবেষণার বিষয়টি অবহেলিত। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি শিক্ষার মান বাড়ানো না হয় এবং গবেষণা না হয়, তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দলীয় রাজনীতি হয়, সেটা এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি বা হওয়ার কোন লক্ষণও নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ই রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থে। কিন্তু তারা কেউই শিক্ষাকেন্দ্রিক রাজনীতি করে না। দলীয় এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনীতি করে; আর এ কারণেই কীভাবে শিক্ষার মান বাড়ানো যায় এবং গবেষণা আরও বেশি করে করা যায়- সে ব্যাপারে কারও কোন চিন্তা এবং উদ্যোগ নেই। দলাদলি এবং রাজনীতি যদি মূল কাজ হয়, তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং গবেষণা কিছুই হবে না। এভাবেই চলতে থাকবে বছরের পর বছর।
আমরা মনে করি, দলাদলি এবং রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। রাজনীতি হতে হবে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে। শিক্ষার মান ও গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়কেই উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, যেসব দেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে- এর মূলে রয়েছে উন্নত শিক্ষা এবং গবেষণা।