ঢাবির ৪ শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর : প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবির ৪ শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর : প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

ঢাবি প্রতিনিধি |

শিবির সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকলে রাজু ভাষ্কর্যে মানববন্ধন করছেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের বিভাগের সহপাঠীরা। এসময় মারধরে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা। এদিকে ওই ঘটনার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুকিমুল হক চৌধুরী বিচার চেয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এখনো অবস্থান করছেন।  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিচার না করা পর্যন্ত তিনি এই অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিচার দাবিতে ঢাবি ছাত্র মুকিমুল | ছবি: সংগৃহীত

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর সকাল থেকে স্লোগান দেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘সন্ত্রাসের কালো হাত ভেঙ্গে দাও’, ‘ভিসি, প্রক্টর, প্রভোস্ট করে কি, খায়-দায় ঘুমায় নাকি?’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি। নির্যাতনকারীদের বিচার দাবিতে একই স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র ঐক্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, কিছুদিন আগেই বুয়েটে আবরার একইভাবে মারধরের শিকার হয়েছেন। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং মারধরকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। এই ক্যাম্পাসে আর কোনো সন্ত্রাসের ঠাই হবে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: ঢাবির হলে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে ৪ ছাত্রকে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তাদেরকে মারা হয়েছে। ওই শিক্ষকদেরও বিচার হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য তাদের। বলেন, কেউ শিবির করলে তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, অন্য কেউ নন। এ ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তারা।

এদিকে হামলার শিকার শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরী বিচারের দাবিতে গতকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছেন রাজু ভাস্কর্যে। বুধবার শাহবাগ থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন তিনি। মুকিমুলের সারা মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাঁটতে গিয়ে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তিনি স্ট্রেচার ব্যবহার করছেন।

অনশনরত ওই শিক্ষার্থীকে হলে ফিরিয়ে আনতে রাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে তার প্রশ্নের মুখে পড়েন হল শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। ওই ছাত্র বলেন, পুলিশ কেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, হলের কোন আবাসিক কেন নিল না? তার বক্তব্য, ক্যাম্পাসে আমার নিরাপত্তা নেই, হলে তিনি কীভাবে যাবেন?

এ সময় হল প্রোভোস্ট ওই ছাত্রকে হলে ফেরা কিংবা বাসায় যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যা হলে তার দায়-দায়িত্ব তিনি নেব। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত হলে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান ওই ছাত্র।

প্রসঙ্গত, 
ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদ ও বিচার চেয়ে অবস্থান নিয়েছেন মারধরে আহত শিক্ষার্থী মুকিমুল হক চৌধুরী। রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৩ জানুয়ারি। ছবি: হাসান রাজা
ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদ ও বিচার চেয়ে অবস্থান নিয়েছেন মারধরে আহত শিক্ষার্থী মুকিমুল হক চৌধুরী। রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৩ জানুয়ারি। ছবি: হাসান রাজা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুকিমুল হক চৌধুরী এখনো অবস্থানে আছেন। গত মঙ্গলবার শিবির সন্দেহে ঢাবির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার শিক্ষার্থীকে পেটায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তিন দফায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তাঁদের পেটানো হয়। ওই ঘটনার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুকিমুল হক চৌধুরী বিচার চেয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন।

গতকাল বুধবার বিকেল থেকে আজ বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন মুকিমুল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিচার না করা পর্যন্ত তিনি এই অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।


মুকিমুলের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাঁর সঙ্গে অবস্থান নিয়েছেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। মুকিমুলের সারা মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাঁটতে গিয়ে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তিনি স্ট্রেচার ব্যবহার করছিলেন।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে শিবির সন্দেহে প্রথমে হল সংসদের কক্ষে, এরপর হলের ছাদে, সর্বশেষ হলের অতিথিকক্ষে চার শিক্ষার্থীকে পেটায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ব্যবহার করা হয় হাতুড়ি আর ডিশের তার। শেষমেশ আবাসিক শিক্ষককে ডেকে পুলিশে দেয়া হয় চার শিক্ষার্থীকে। 

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এই চারজন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে প্রায় ১১ ঘণ্টা শাহবাগ থানার হাজতে রাখার পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

মারধরের শিকার বাকি তিনজন হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন এবং একই বর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীন। তাঁদের অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ততার অভিযোগ এনে গত বছরের অক্টোবরেও মুকিমুল ও আফসারকে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেবারও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তারা হলেই থাকছেন।

নির্যাতনের শিকার মুকিমুল হক চৌধুরী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হলের ৪০০৫ নম্বর কক্ষে মঙ্গলবার রাতে তিনি গল্পের বই পড়ছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন ফোন দিয়ে অতিথিকক্ষে যেতে বলেন। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামাল উদ্দিন, হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সাইফুল্লাহ আব্বাসীসহ ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন। অতিথিকক্ষে এক ছাত্রের জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাকে নিয়ে হল সংসদের কক্ষে চলে যান। আনোয়ার হোসাইন তখন তাকে মুঠোফোনে কয়েকটি স্ক্রিনশট দেখিয়ে এগুলো কী জিজ্ঞেস করেন। তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না, এমনটা বলার পর তাকে চড়থাপ্পড় দেন তিনি।

মুকিমুল বলেন, স্ক্রিনশটগুলো আবার দেখালে তিনি সেখানে শিবির নিয়ে কিছু কথোপকথন দেখতে পান। এগুলো তার না বলে তিনি উত্তর দিলে আবারও তাকে পেটানো হয়। হল সংসদের কোনো এক জায়গা থেকে ছাত্রলীগ নেতারা তখন একটি হাতুড়ি বের করেন। এরই মধ্যে সানোয়ারকে ডেকে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। 

দুজনকে হলের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বেধড়ক কিলঘুষি দিতে থাকেন। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ডিশের তার দিয়ে বাড়ি দিতে থাকেন। সহসভাপতি কামাল উদ্দিন হাতুড়ি দিয়ে হাত ও পায়ের জোড়ায় জোড়ায় বাড়ি মারেন। দেড়টা পর্যন্ত কয়েক দফায় পেটানোর পর তাদের হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে আসা হয়। 

তখন মিনহাজ ও আফসারকে অতিথিকক্ষে নিয়ে আসা হয়। হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তখন তাকে (মুকিমুল) অতিথিকক্ষ থেকে বের করে হলের পড়ার কক্ষের সামনে নিয়ে যান। সেখানে আবারও তাকে পেটান।

এ সময় হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন। তার সামনে চারজনকেই পেটাতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা এলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাকে ও সানোয়ারকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

জানতে চাইলে আবাসিক শিক্ষক বিল্লাল হোসেন মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন। আর এই চার ছাত্রকে নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন ১২ ছাত্রসংগঠনের জোট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য।

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040087699890137