স্বাধীনতার আগে মেঘনা নদীর প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ছিল মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিন নদীর মোহনা থেকে প্রায় কিলো পাঁচেক দূরে বাহেরচর-শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতেই দীর্ঘ লম্বা টিনশেড ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। আশির দশকের দিকে স্কুলের পাশেই দ্বিতল সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। স্কুলের কার্যক্রম নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে পুরনো টিনশেডে চরবগি এ রব দাখিল মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরনো জরাজীর্ণ সাইক্লোন শেল্টারের বিপরীতেই নতুন স্কুল-কাম-সাইক্লোন শেল্টারের দ্বিতল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। তখনো নতুন ভবন থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর দিয়ে বইছিল নদী।
নতুন ভবনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর পর মেঘনা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। মাত্র দুই বছরের মাথায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর নতুন সাইক্লোন শেল্টারটি হঠাৎ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে প্রাথম দিকে বানানো পুরনো টিনশেড ঘরে স্কুলের কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুনের দিকে টিনশেড ভবনটিও মেঘনার পেটে চলে যায়। আগেভাগেই স্কুলের আসবাব পুরনো জনাজীর্ণ সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেটিও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিন লাখ টাকা দিয়ে আপৎকালীন স্কুল ঘর নির্মাণে সহযোগিতা করে। বিভিন্নজনের কাছ থেকে আরো দ্বিগুণ টাকা তুলে প্রায় ৯ লাখ টাকায় মেঘনা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আধাপাকা স্কুল ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু স্কুল যতই মেঘনা থেকে দূরে সরানো হয়, তার চেয়ে দ্রুতলয়ে মেঘনা স্কুলের দিকে ছুটে আসছিল। সব শেষে এবার করোনাকালে স্কুলের খুব কাছাকাছি চলে আসে মেঘনা। গত জুলাইয়ে স্কুলের জমিটুকু চলে গেছে নদীতে। এর আগেই নদী থেকে রক্ষার জন্য স্কুল ঘরটি খুলে ফেলা হয়। দ্রুত আসবাব সরিয়ে ফেলা হয়।
প্রধান শিক্ষক মাহবুব বলেন, নতুন সাইক্লোন শেল্টারটি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টেবরের শেষ দিকে নদীতে ভেঙে যায়। তখন স্কুলে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। ওই ঘটনা পর্যন্ত পর পর তিনবার নদীতে বিলীন হয় স্কুল ভবন।