তিন লাখে দর-কষাকষি আড়াই লাখে চুক্তি! - দৈনিকশিক্ষা

রাবিতে ভর্তি পরীক্ষাতিন লাখে দর-কষাকষি আড়াই লাখে চুক্তি!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

‘শান্ত ভাইয়া, আমি এবার সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার রেজাল্টও খারাপ। বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে, যে করেই হোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। যত টাকা লাগে দেব।’ তখন ফোনের ওপাশ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি কোন ইউনিটে ফরম তুলেছ? আমাদের কিছু সিস্টেম আছে। ঢাকা থেকে এসে তোমার পরীক্ষা দিয়ে যাবে। সায়েন্সে একটু সমস্যা, কিন্তু আর্টসে (মানবিক) কাজ করা যাবে। আর এ জন্য তিন লাখ টাকা লাগবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ভর্তীচ্ছুর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্তর মুঠোফোনের কল রেকর্ডিং এটি। গত বৃহস্পতিবার এই কল রেকর্ডিংটি এ প্রতিবেদকের কাছে এসে পৌঁছেছে।

আগামী ২২-২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠছে জালিয়াতচক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করার কথা বলে ভর্তীচ্ছুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। প্রতিবছর এ ধরনের ঘটনায় জড়িতরা আটক হলেও থামছে না এসব কর্মকাণ্ড।

রেকর্ডিংয়ের একপর্যায়ে ওই ভর্তীচ্ছুকে বলতে শোনা যায়, ‘গত বছর আমার পরিচিত এক বড় ভাই আপনাদের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিল। এ বছর যে করেই হোক আমাকে ভর্তি হতে হবে।’ তখন এই ছাত্রলীগ নেতা জবাব দেন, ‘ঠিক আছে, মেরিট লিস্টে নাম আসার পর তোমাকে টাকা দিতে হবে। এর আগে পাঁচ হাজারের মতো টাকা দেওয়া লাগতে পারে। এক্সপার্টরা (প্রক্সিদাতা) ঢাকা থেকে আসে তো, ওদের জন্য কিছু টাকা লাগে।’ রেকর্ডিং অনুযায়ী দর-কষাকষির একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে আড়াই লাখ টাকায় ভর্তি করার চুক্তি হয়।

ফোন রেকর্ডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে তারেক আহমেদ খান শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে একটা ফোন এসেছিল। এর পর থেকে ওই ফোন নম্বর বন্ধ। পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত ও উপপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।’ তবে এ বিষয়ে হাসিবুল হাসান ও কাউসারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যারা জালিয়াতি করছে তাদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে আছেন। ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে পরীক্ষার্থী ও প্রক্সিদাতার ছবিতে কারসাজি এবং যেকোনো উপায়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহের পর সমাধান করে তা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কাছে পাঠানোর মাধ্যমে এই জালিয়াতির ছক আঁকছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত একটি কোচিং সেন্টার থেকে এ বছর ভর্তি জালিয়াতি সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে বলে গত শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কাটাখালি এলাকায় স্থানীয় একটি প্রতারকচক্র প্রতিবছরই গোপনে ভর্তি পরীক্ষার নাম করে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির কাজ করে। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চক্রটি এ কাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গত কমিটির এক যুগ্ম সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিবছরই রাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এসব ভর্তি বাণিজ্য পরিচালনা করেন। সংগঠনের কর্মীরা ভর্তীচ্ছু সংগ্রহ করে। এরপর টাকা মিটিয়ে ভর্তীচ্ছুদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা মার্কশিট রেখে দেন তাঁরা। পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটি আবাসিক হলের কক্ষে ভর্তীচ্ছুদের একসঙ্গে বসিয়ে উত্তরপত্রসহ প্রশ্ন সরবরাহ কিংবা প্রক্সির মাধ্যমে জালিয়াতি সম্পন্ন করেন ছাত্রলীগের এই নেতারা।’

ভর্তি জালিয়াতির এসব ঘটনা নতুন নয় রাবিতে। গত বছর ১৮ জুলাই পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে রাজশাহী মোহনপুর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে বান্ধবীসহ গ্রেপ্তার হন রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন। গত ১৭ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদি হাসান সজল ও ছাত্রলীগের কর্মী মোস্তফা বিন ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমাদের কোনো নেতাকর্মী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত কি না আমার জানা নেই। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো নেতাকর্মীর এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর থাকবে। আমাদের আগামীকাল (আজ) এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং আছে। সেখানে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044610500335693