দারিদ্র্যতার কারণে বেড়েছে বাল্যবিয়ে, ঝরছে ছাত্রীরা - দৈনিকশিক্ষা

দারিদ্র্যতার কারণে বেড়েছে বাল্যবিয়ে, ঝরছে ছাত্রীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অশিক্ষা, কুসংস্কার ও দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিবাহ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। মাধ্যমিক পর্যায়েই ঝরে পড়ছে বেশির ভাগ ছাত্রী। বিয়ের কারণে এসএসসি পাসের আগেই স্কুলজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটছে তাদের। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিকেছেন আলমগীর চৌধূরী।

জেলায় এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সহস্রাধিক ছাত্রী ঝরে গেছে। বাল্যবিবাহরোধে কোনো সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডই কাজ করেনি তাদের ক্ষেত্রে। এমনকি প্রশাসনের নজরদারিও কাজে লাগছে না। অভিভাবকরা গোপনে এসব বাল্যবিবাহের আয়োজন করছেন। এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ঝরে পড়া ছাত্রীদের পরিসংখ্যান থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে সময় ভর্তি হওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৯৬ জন। যাদের মধ্যে স্কুলে ভর্তি হয় পাঁচ হাজার ৪৮৩ জন এবং মাদরাসায় ভর্তি হয় এক হাজার ৬১৩ জন ছাত্রী। দুই বছর অধ্যয়নের পর ওই ছাত্রীরা এবার অংশ নেয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার ১৫৭টি মাধ্যমিক স্কুল ও ১১৩টি মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে পাঁচ হাজার ৮৭৬ জন ছাত্রী। যাদের মধ্যে এসএসসিতে চার হাজার ৫৫২ জন এবং দাখিলে অংশ নেয় এক হাজার ৩২৪ জন ছাত্রী। সেই হিসাবে গত দুই বছর এক হাজার ২২০ জন ছাত্রী ঝরে পড়ে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, পরিবারের চাপেই কিশোর বয়সে এসব ছাত্রীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। জয়পুরহাট সদরের হেলকুণ্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়র রহমান জানান, এসএসসি পরীক্ষায় এবার তাঁর স্কুল থেকে অংশ নিচ্ছে ৩২ জন ছাত্রী। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে এই ব্যাচের ছাত্রী ছিল ৪০ জন। তাদের মধ্যে বাল্যবিবাহের কারণে সাতজন ছাত্রী পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, অশিক্ষা, কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে এসএসসি পাসের আগেই অনেক ছাত্রী ঝরে পড়ছে।

আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, তাঁর স্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ৪৭ জন। তারাই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তখন তাদের সংখ্যা ছিল ৫৫ জন। এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝরে গেছে আটজন শিক্ষার্থী।

ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষ্ণনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশিদ বলেন, তাঁর স্কুলে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪৪ জন। এবারের এসএসসি পরীক্ষার আগেই বাল্যবিবাহের কারণে চারজন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।

কালাই উপজেলার চান্দাইর দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী মুনছুর রহমান জানান, এবার তাঁদের মাদরাসা থেকে ১১ জন ছাত্রী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। নবম শ্রেণিতে তাদের সংখ্যা ছিল ১৭ জন। সেই হিসাবে ছয়জন ছাত্রী ঝরে পড়েছে।

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, কিশোর বয়সে বিয়ে দেয়া শুধু যে ছেলেমেয়ের ক্ষতি তা নয়, পুরো সমাজই এর জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর গত দুই বছরে ক্ষেতলালে অন্তত ১০টি বাল্যবিবাহ তিনি বন্ধ করেছেন। কিন্তু পরে জেনেছেন, এতে তেমন একটা লাভ হয়নি। কারণ বিবাহ বন্ধ হওয়া ওই সব ছেলেমেয়েকে তাদের অভিভাবকরা গোপনে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বাল্যবিবাহরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

জয়পুরহাট জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সদ্য অবসরে যাওয়া সদর উপজেলার দোগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, স্কুলছাত্রীদের বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রধান অন্তরায় তাদের অভিভাবকরা। প্রশাসনের ভয়ে তাঁরা গোপনে অন্যত্র নিয়ে তাঁদের অপ্রাপ্ত বয়সী মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় কাজিদের পরিবর্তে মসজিদের ইমাম দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়। এ জন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি ইমামদেরও সচেতনতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, জেলায় বাল্যবিবাহ বন্ধে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্কুলগুলোতে ‘নিরাপদ জয়পুরহাট’ নামের একটি অ্যাপস সরবরাহ করা হয়েছে। যা দিয়ে সহজেই বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জেলার স্কুলগুলোতে মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, বাল্যবিবাহরোধে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্ব্বয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জেলায় বাল্যবিবাহ বন্ধের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0083050727844238