দেশে করোনার পিক চলছে, স্বাস্থ্যবিধি মানলেই সংক্রমণ কমে যাবে - দৈনিকশিক্ষা

দেশে করোনার পিক চলছে, স্বাস্থ্যবিধি মানলেই সংক্রমণ কমে যাবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলার যাবতীয় পরিকল্পনা এবং জীবন-জীবিকা পরিস্থিতির দিকনির্দেশের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে করোনায় মৃত্যুহারের সূচকটি। গত চার মাসের পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার যত ওপরের দিকে উঠেছে, শনাক্ত তুলনায় মৃত্যুহার ততই নেমেছে নিচের দিকে। সেই সঙ্গে সুস্থতার হার উঠে গেছে অনেক ওপরে, যা থেকে শুভ ইঙ্গিতই মিলছে। বুধবার (২ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তৌফিক মারুফ।

প্রতিবেদনে আর জানা যায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনায় যেভাবে মৃত্যুহার কমছে, আর সুস্থতার হার বাড়ছে তা ইতিবাচক। তবে অবশ্যই সংক্রমণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, পরীক্ষা কম হওয়া নিয়ে প্রশ্ন  থাকলেও তা মৃত্যুহারের ওপর প্রভাব ফেলছে না। বরং এ ক্ষেত্রে শনাক্ত যত বেশি হচ্ছে, মৃত্যুহার ততই কমে যাচ্ছে। এ সূচকের ভিত্তিতেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি বাড়ছে, কমছে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যেমন সব কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে থাকে প্রতিটি দেশের সরকারি তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করে, তেমনি সংস্থার সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোও একই নীতিমালা অনুসরণ করে সব পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশও একই পথে এগোচ্ছে শুরু থেকেই।

 
দুই সূচকেই শুভ ইঙ্গিত

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২১ জানুয়ারি থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষা শুরু হয়। ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর ঘটনা জানা যায়। এরপর ১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট পরীক্ষা হয় এক হাজার ৭৫৯টি নমুনা। এর মধ্যে ওই দিন পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫৪, আর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ছয়। অর্থাৎ পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ছিল ৩ শতাংশ, আর শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ছিল ১১.১১ শতাংশ। এর ঠিক এক মাসের মাথায় ১ মে পর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয় ৭৬ হাজার ৬৬টি। তখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয় আট হাজার ৭৯০ জন, আর মৃত্যু হয় ১৭৫ জনের। দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষায় তুলনায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১.৫৫ শতাংশ। কিন্তু শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার নেমে যায় ১.৯৯ শতাংশে। এরপর ১ জুন পর্যন্ত দেশে মোট পরীক্ষা হয় তিন লাখ ২০ হাজার ৩৬৯টি নমুনা। শনাক্ত হয় মোট ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন রোগী। আর মৃত্যু হয় ৬৭২ জনের। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ১৫.৪৬ শতাংশ। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কমে হয়েছে ১.৩৫ শতাংশ। সর্বশেষ গতকাল বুধবার ১ জুলাই পর্যন্ত মোট পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৩৩৫। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ২৫৪। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৮৮৮। দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার আরো বেড়ে হয়েছে ১৯.০৩ শতাংশ। আর শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার কমে হয়েছে ১.২৬ শতাংশ।

অন্যদিকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাড়তে শুরু করে সুস্থতার হার। গতকাল পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছে ৬২ হাজার ১০৮ জন। শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৪১.৬১ শতাংশ।

অবশ্য নমুনা পরীক্ষা কম হওয়া নিয়ে সবার প্রশ্ন আছে। বিশেষজ্ঞরা এখনো বেশি বেশি পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন। অন্যদিকে প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে, যাকে করোনার উপসর্গ বলা হচ্ছে, তাতে মৃত্যুর বিষয়টি পর্যালোচনা করা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

সাবধান, কোরবানির ঈদ সামনে!
ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

করোনা প্রতিরোধে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটির সদস্যসচিব ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যেকোনো মহামারি মোকাবেলার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ও সুস্থতার সূচক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সংক্রমণ ব্যাপক হলেও মৃত্যুহার যদি কম থাকে তবে পরিস্থিতি মোকাবেলা অনেকাংশে সহজ হয়। আমাদের দেশে ধারাবাহিকভাবে যেভাবে মৃত্যুহার কমছে এবং সুস্থতার হার বাড়ছে তা আমাদের কাছে ইতিবাচক ব্যাপার। সেই সঙ্গে পরীক্ষা কম হলেও পরীক্ষার তুলনায় প্রতিদিনকার শনাক্তের হারও কিন্তু অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে অনেক দিন ধরেই।’

তবু ওই বিশেষজ্ঞ বারবারই জোর দিয়েছেন সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম আরো শক্ত করার ওপর। তিনি বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদ ঘিরে যদি মানুষের চলাচল রোজার ঈদের মতোই বেপরোয়া হয়ে ওঠে তবে পরিস্থিতি খারাপের আশঙ্কাই বেশি। তাই আমরা পরামর্শ দিয়েছি কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এখন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য। কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত ও মৃত্যুহার যা আছে তা আর বাড়তে না দিয়ে যদি আমরা কমের দিকে নিয়ে যেতে পারি তবে আমাদের চিন্তা কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও অবশ্যই আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংক্রমণের বিস্তার যত ভালোভাবে ও দ্রুত ঠেকানো যাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুও তত দ্রুত বন্ধ হবে।’

 
সব কিছু খুলে দিলে ভালোটা থাকবে না
ড. মুশতাক হোসেন 

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমরা একটানা অনেক দিন ধরেই একটা সমান্তরাল অবস্থার মধ্যে আছি। মাঝে এক-দুই দিন হঠাৎ করেই মৃত্যুসংখ্যা বেশি হলেও তা ধারাবাহিক হয়নি। ফলে এখানে কিছুটা স্বস্তির দিক আছে। যদি ২৪ ঘণ্টার হিসাবে একটানা কমপক্ষে সাত দিন কোনো সূচক ওপরে উঠতে থাকে বা নিচে নামতে থাকে তবে তার ওপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনামূলক পরিকল্পনা হয়ে থাকে। আবার যদি একটানা অনেক দিন একই অবস্থায় থাকে সে সূচকও এক ধরনের ভালোর ইঙ্গিত দেয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সংক্রমণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না করে সব কিছু উন্মুক্ত করে দিলে স্বাভাবিকভাবে যেকোনো সময় ফল ভালো থেকে খারাপে চলে যেতেই পারে।’

 

এখন পিক ক্রস করছি
গবেষক বিজন শীল 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক বিজন শীল বলেন, ‘আমরা এখন খুবই ভালো অবস্থায় আছি বলেই আমি মনে করছি। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আমরা এখন পিক (চূড়া) ক্রস (অতিক্রম) করছি। এর পরই নিচের দিকে নামব। মৃত্যু ও সুস্থতার সূচকও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।’ তিনি বলেছেন, সব মহামারির সময়ই প্রথম দিকে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি থাকে। সংক্রমণের তীব্রতাও বেশি থাকে। আক্রান্তদের উপসর্গ ও জটিলতাও তীব্র হয়ে থাকে। একপর্যায়ে গিয়ে সেগুলোও কমতে থাকে। এখন সেই অবস্থাই চলছে।

ড. বিজন বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, মানুষ যদি আরেকটু কষ্ট করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারব। যদিও দেশের মধ্যে এলাকাভিত্তিক কিছু বিচ্ছিন্ন পিক হতে পারে, সে অনুসারে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিলেই চলবে।’

আইইডিসিআরের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পরীক্ষা কম হওয়া নিয়ে সংশয় আছে সবার। কিন্তু ধরা যাক, পরীক্ষা এখনকার চেয়ে আরো কয়েক লাখ বেশি হলো, শনাক্তের সংখ্যাও আরো কয়েক গুণ বেড়ে কয়েক লাখ হলো। কিন্তু তাতে মৃত্যুহার তো খুব একটা হেরফের হবে না। যদি ধরা হয়, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুসংখ্যা সরকারি মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে কয়েক শ বেশি, তবু আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার উল্টো কমে যাবে, বাড়বে না। বরং সুস্থতার হারও কয়েক গুণ বাড়বে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035781860351562