সেলিম সুলতান। সহকারী প্রধান শিক্ষক। যশোর ফুলবাড়ি সিদ্দীন আউলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ হয় তার। প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক শাখা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন তিনি। কয়েক মাস পর পর স্কুল থেকে এক হাজার টাকা দেয়া হয় তাকে। টিউশনির উপর নির্ভর করে তিনি সংসার চালান। করোনার জন্য স্কুল ও টিউশনি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন। কীভাবে ঈদ কাটবে সেই চিন্তার অন্ত নেই তার।
শুধু সেলিম নয় তাদের প্রতিষ্ঠানে এ রকম ছয়জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চাকরি করেন বলে কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তারা কারো কাছে সহযোগিতা চান না। তাদের প্রতিষ্ঠান এমপিও পাওয়ার সব যোগ্যতাই অর্জন করছে। এমপিওভুক্তির মাধ্যমে বেতন দিলেই তারা খুশি।
শহিদুল ইসলাম। প্রধান শিক্ষক যশোর বিআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। স্কুলের এমপিও না থাকায় তার ভাগ্যে বেতন জোটেনি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে যৎসামান্য বেতন নেন তাই দিয়ে খুব কষ্টে সংসার চলে তার। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তারা বেতন নিতে পারছেন না। কীভাবে ঈদ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। তার মতো একই অবস্থা তার স্কুলের দশজন শিক্ষক-কর্মচারীর।
আশরাফুল ইসলাম বিপু। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে নিজে চৌগাছায় হাকিমপুর মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকে তিনি অধ্যক্ষ। একযুগের বেশি সময় পার হলেও এমপিও হয়নি তার প্রতিষ্ঠান। ছাত্রীদের বেতনে কলেজ চলতো। করোনার কারণে ক্লাস বন্ধ। বেতনও নিতে পারছেন। প্রতিষ্ঠানে কেউ সহযোগিতা করেন না। এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তিনি কোন অনুদান চান না। শুধুমাত্র কাজের পারিশ্রমিক চান।
আশাদুল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চৌগাছা জেএমএসকে কলেজ। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানে। চাকরির পাশাপাশি তার শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ অন্য পেশায় জড়িত না। প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের যে বেতন দেয়া হয় তাও বন্ধ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের না খেয়ে মরা ছাড়া পথ থাকবে না।
জানা গেছে, হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নয় যশোর জেলায় ননএমপিও ১০৬টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। সেখানে কয়েক শত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। তাদের সবার অবস্থাই চরম নাজুক। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাঘারপাড়ায় ৭, ঝিকরগাছায় ২৫, কেশবপুরে ১৩, চৌগাছায় ১৩, মণিরামপুরে ১৯, সদরে ১৮ ও শার্শায় ১১টি স্কুল কলেজ রয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুল খালেক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ননএমপিও শিক্ষকদের প্রতি তার অন্য রকম মনোভাব রয়েছে। কোনো সুবিধা থাকলে তাদের একটু বেশি দেয়া হয়। করোনা দুর্যোগে সরকার শিক্ষকদের কোনো সুবিধা দিলে তাদেরকে সেই আওতায় আনার জন্য জোর চেষ্টা করবেন তিনি।