নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষকদের খুশি করার চেষ্টা, নেতাদের সংশয় - দৈনিকশিক্ষা

নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষকদের খুশি করার চেষ্টা, নেতাদের সংশয়

নূর মোহাম্মদ |

সরকারের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে বেসরকারি শিক্ষকদের বেশিরভাগ দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি, শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা ও পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা,  অবসরত্তোর ২৪ হাজারের বেশি শিক্ষকদের জন্য ৫৩২ কোটি টাকার অনুদানের মতো বড় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে এসব দাবি দাওয়া কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, শিক্ষকদের দেয়া অনেক দাবি অপূর্ণ রয়ে গেছে।

শিক্ষক নেতারা এসব দাবি আসন্ন নির্বাচনের আগেই পূরণের দাবি করে বলেন, অন্যথায় সরকারের প্রতি এবং নির্বাচনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী এসব প্রতিশ্রুতি দেন। সভায় সরকার সমর্থক শিক্ষক নেতারা সরকারের মেয়াদের অন্তিম মুহূর্তে এ ধরনের সভা আহ্বানের ব্যাপারে ক্ষোভ ও হতাশার কথা ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক আরো আগে আহ্বান করা উচিত ছিল।

শিক্ষাখাতে সরকারের অর্জন অনেক হলেও, এ সফলতার সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের কোনো ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়নি। এখনো শিক্ষকদের অনেক দাবি অপূর্ণ রয়ে গেছে।

শিক্ষক নেতারা এসব দাবি আসন্ন নির্বাচনের আগেই পূরণের দাবি করে বলেন, অন্যথায় সরকারের প্রতি এবং নির্বাচনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। একই সঙ্গে শেষ সময়ে এসে এত লম্বা দাবি কিভাবে মেনে নেয়া হবে তারও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চান তারা। বিভিন্ন সংগঠনের শিক্ষক নেতারা বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা না হলে সারা দেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সরকার মান সম্পন্ন শিক্ষার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সুফল পেতে হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা ও পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা অবিলম্বে প্রদানের ঘোষণা দিতে হবে। এ দাবিগুলো শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি।

বৈঠকের পর শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষকদের খুশি করার জন্য কিছু সুখবর দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং ৫ শতাংশ বৈশাখী ভাতার যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো বাস্তবায়ন হবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা, কল্যাণ তহবিলের জটিলতা দূর করার কাজটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। পরে আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, এবার নতুন প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে অন-লাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে এবং স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-কারিগরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৯ হাজার ৪৯৮টি আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যাচাই-বাছাই চলছে। সরজমিনে যাচাই-বাছাইয়ের পর এমপিওভুক্ত করা হবে। এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সভা শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বলেন, বৈঠকে শিক্ষকদের বেশ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা হয়েছে। সরকার শিক্ষক সমাজের দাবি বাস্তবায়নে আন্তরিক। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের উপর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হলে বার্ষিক ৪০০ কোটি ৮৪ লাখ টাকার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের বেতনের উপর ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হলে ১৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার দরকার। নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেটে এই দুই খাতের জন্য ৫০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে তা মিটিয়ে নেয়া হবে। অন্যদিকে শিক্ষকদের অবসরের ২৪ হাজার আবেদন জট কমাতে ৫৩২ কোটি টাকার অনুদান দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী। মতবিনিময় সভা শেষে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতা ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অবসর কল্যাণ তহবিলের ৭৫৭ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি। এর মধ্যে অবসরের জন্য ৫৩২ কোটি টাকা আর কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২২৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। 

অবসর বোর্ড সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা এর অনিষ্পত্তিকৃত আবেদনের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৫৩টি। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ১ হাজার ৭৫৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অবসর বোর্ডের জন্য ৫৩২ কোটি টাকার বিশেষ অনুদান পাওয়া গেছে। অন্যদিকে অবসর বোর্ডের এসটিডি হিসাবে ২১৬ কোটি ও এফডিআর হিসাবে ১২৮ কোটি টাকা মিলে মোট ৩৪৪ কোটি টাকা জমা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানের ৫৩২ কোটি ও অবসর বোর্ডের ৩৪৪ কোটি টাকা মিলে মোট ৮৭৬ কোটি টাকা রয়েছে। এতে মোট ১৫ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব। আর বাকি ৯ হাজার আবেদন নিষ্পত্তির জট খুলতে আরেকটি বিশেষ বরাদ্দ দরকার। অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব বলেন, এখন ২০১৫ সালের জুন মাসের আবেদন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এখন যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে তাতে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

বিশেষ আমন্ত্রণে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সংগঠন ‘স্বাধীনতা শিক্ষা সংসদের (স্বাশিস) আহ্বায়ক প্রফেসর নাসির উদ্দিন, সদস্য সচিব সৈয়দ জাফর আলী ও ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক বিপুল চন্দ্র সরকার, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আসাদুল হক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতা ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আজিজুল ইসলাম ও আবদুল আওয়াল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলম সাজু, স্বাধীনতা মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজীসহ ৩৯টি সংগঠনের শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।   

 

সৌজন্যে: মানবজমিন

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007080078125