২০১২ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে একটি নীতিমালা তৈরি করেছিল। সেই নীতিমালা সাড়ে ছয় বছর পর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালা প্রকৃতপক্ষে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কোনো ভূমিকা তো রাখেইনি, বরং এতে কোচিং বাণিজ্য উৎসাহিত হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোচিং হল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলাকালীন নির্ধারিত ক্লাসের অতিরিক্ত শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বা বাইরের কোনো স্থানে পাঠদান। এতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলে অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা যাবে এবং এজন্য নির্ধারিত হারে ফি প্রদান করতে হবে।
নীতিমালায় কোচিং ও কোচিং বাণিজ্যের মধ্যে একটি ভেদরেখা টানার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোচিং বাণিজ্য হল মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কোচিং কার্যক্রম পরিচালনা করা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত ফি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে কোচিং করা যাবে, যদি সেই কোচিংয়ে বাণিজ্যের গন্ধ না থাকে।
অদ্ভুত ব্যাপারই বটে। কোন্ ফি বাণিজ্য আর কোনটা বাণিজ্য নয়, এটা কীভাবে নির্ধারিত হবে? বোঝা গেল, নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকরা নিজ বাসভবনে কিংবা কোনো বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না। কিন্তু তাতে কি পরিস্থিতির ইতরবিশেষ কিছু হল? ‘অতিরিক্ত ক্লাস’-এর নামে পাঠদান করা হচ্ছে, সেটাও তো কোচিংই এবং তাতেও টাকা গুনতে হচ্ছে।
অভিভাবকরা বলছেন, নীতিমালাটি প্রণয়নের পর কোচিং বাণিজ্য আরও উৎসাহিত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেএসসি, জেসিডি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার আগে বাধ্যতামূলকভাবে কোচিংয়ের আয়োজন করছে। কয়েকদিন আগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময় আলাদাভাবে নগদে কোচিং ফি নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ফি নেয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা দৈনিক শিক্ষায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নীতিমালাটি প্রকাশের পর কিছুদিন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলোর কর্মকর্তারা কোচিং বাণিজ্য থেকে বিরত থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই তারা আবারও চালু করেছেন কোচিং কার্যক্রম।
এটা স্পষ্ট, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে প্রণীত নীতিমালাটি কোনো কার্যকর ভূমিকাই পালন করতে পারছে না। অর্থাৎ কোচিং বাণিজ্য বন্ধের মূল দাবিটিই উপেক্ষিত হয়েছে। এতে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
আবার যারা কোচিংয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন তাদের কারো কারো সন্তানকে কোচিং সেন্টারে বিনা পয়সায় পড়ানোর সুযোগ নিচ্ছেন। কোচিং সেন্টারকে হুমকি-ধমকি ও হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে। আবার মুখে কোচিং বিরোধী হলেও কোচিং সেন্টারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ কাড়ি কাড়ি টাকা কামাচ্ছেন কথিত স্যুভেনির প্রকাশ করার মাধ্যমে।
শুধু তাই নয়, কোচিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার যে খেলা চলছে, তাতে তারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে না।
এমতাবস্থায় স্বাভাবিক কারণেই কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নতুন কোনো নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠবে।