পদ আঁকড়ে রাখতে ইসি ভিসির বিভক্তির রাজনীতি - দৈনিকশিক্ষা

পদ আঁকড়ে রাখতে ইসি ভিসির বিভক্তির রাজনীতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ আশকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারী সবার কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এক সময় ক্যাম্পাসে অগোছালো প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে এনে সংগঠিত করতে পেরেছিলেন। মেয়াদ শেষের কাছাকাছি এসে আস্থার প্রতীক সেই ভিসির বিরুদ্ধেই নতুন করে বিভক্তির রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে। মূলত ফের ভিসি পদে বহাল থাকতে হারুন-উর-রশিদ আশকারী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের। এ সুযোগে ক্যাম্পাসে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের জয়। রোববার (১৪ মার্চ) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাজ্জাদ রানা।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই শুধু বিভাজন সৃষ্টি করছেন না ভিসি হারুন-উর-রশিদ আশকারী, তার অনুসারীদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকেও দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংগঠন তার মনঃপূত না হলে রাতারাতি বৈধ কমিটিকে রুখতে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের দিয়ে পাল্টা কমিটি তৈরি করেছেন। সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক  মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা  অভিযোগ উঠলেও ভিসির প্রশ্রয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. আশকারী। শুরুর দিকে ভালো কাজ করে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনগুলোকে এক কাতারে

নিয়ে আসেন তিনি। ক্যাম্পাসে অনেক উন্নয়নও হয়েছে তার সময়ে। তবে তার অনুসারী কয়েকজন শিক্ষকের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সেই অর্জন কিছুটা হলেও ম্লান হতে চলেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের নানা অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে এলেও ভিসি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাকে হাতের মুঠোয় রেখেছেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মন্ত্রণালয়ের সনদ ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে ভিসির পিএস রেজাউল করিম রেজা ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন। তার জালিয়াতি প্রমাণ হলেও এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি ভিসি।

অবশ্য এসব অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক প্রক্টর ও শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ইবিতে চাওয়া-পাওয়ার রাজনীতি চলছে। ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কিছু শিক্ষকের মধ্যে ক্ষমতার লোভ থেকে তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনেও টের পাওয়া গেছে। আর আমার বিরুদ্ধে একটা অনিয়মেরও কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না।’

ভিসি ড. আশকারী বলেছেন, ‘যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদেরই প্রতিটি জায়গায় বসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সিন্ডিকেট বা গ্রুপিং নেই। সবার মতামতের ভিত্তিতে ক্যাম্পাস চলছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি সেক্টরে জবাবদিহি নিশ্চিত করেছি। নতুন নতুন বিভাগ খুলেছি। মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে গেছে। আমার সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি, পারবেও না।’

শিক্ষক সংগঠনে ভাঙন : ইবিতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ। দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানকে সভাপতি ও অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়। এ কমিটির নেতারা ভিসিবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এ কারণে তাদের বিপক্ষে অন্য একটি গ্রুপকে সক্রিয় করেন ভিসি। 

‘বঙ্গবন্ধু পরিষদের নির্বাচন কমিশন’ নামে এ গ্রুপ কার্যক্রম শুরু করে গত বছরের জানুয়ারি থেকে। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে একটি সংগঠন থাকলেও ইবিতে ভিসিপন্থিরা এ থেকে আলাদা হয়ে পৃথক কমিটি গঠন করেন। তবে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিষদের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া সম্পাদক আনন্দ কুমার সেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু নির্বাচন কমিশন’ নামে সংগঠনের তৎপরতা বন্ধের নির্দেশ দেন।

শিক্ষকদের বিভাজনের কারণে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা দুটি প্যানেলে অংশ নেন। একপক্ষে অধ্যাপক কাজী আখতার হোসেন সভাপতি এবং সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। ভিসিবিরোধী হিসেবে পরিচিত প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন এবং সম্পাদক পদে অধ্যাপক আনোয়ারুল হক স্বপন অংশ নেন। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেন। বিভক্তি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামেও।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতেই ভিসি তার অনুসারীদের দিয়ে একের পর এক কমিটি করছেন। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

শিক্ষক সংগঠনে বিভক্তির বিষয়ে ভিসি হারুন-উর-রশিদ আশকারী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। তাই সংগঠনে নেতৃত্ব নিয়ে কিছু প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে আমরা চাই সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে। আমি সে চেষ্টাই করছি।’

কর্মকর্তা সমিতিতে বিভক্তি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা তিন দফা দাবিতে প্রায় দেড় বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর মাঝে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের কার্যনির্বাহী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে ভিসিবিরোধী কর্মকর্তাদের প্যানেল। এরপর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেন ভিসিপন্থি কর্মকর্তারা।

কর্মচারী সংগঠনে বিভেদ : সহায়ক কর্মচারী সমিতির ২০২০-এর কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনেও হেরে যান ভিসিপন্থিরা। এরপর টেকনিক্যাল সহায়ক সমিতি নামে পাল্টা কমিটি গঠন করেন ভিসিপন্থি হাতেগোনা কয়েকজন কর্মচারী।

ছাত্রলীগে বিভক্তি : আট মাস বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর গত বছরের ১৪ জুলাই দুই সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তারা দু’জনই ভিসি ড. আশকারী ও সাবেক প্রক্টর মাহবুবুর রহমানের প্রার্থী ছিলেন বলে অভিযোগ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার। তারা বলছেন, পলাশের বাড়ি ভিসির এলাকায়। এছাড়া ত্যাগী নেতারা যাতে কমিটিতে আসতে না পারেন, সে জন্য কেন্দ্রে তদবিরও করা হয়েছে ইবি প্রশাসন থেকে।

ইবি ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান লালন বলেন, ‘প্রগতিশীল সংগঠনকে দুর্বল করার জন্য ভিসি ও সাবেক প্রক্টর যা যা করার সবই করছেন। ছাত্রলীগের কমিটি আনতে তারা অর্থ খরচ করেছেন। ছাত্রলীগ দুর্বল হলে শিবির সংগঠিত হতে পারবে। শিবিরের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রগতিশীলদের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ভিসির বক্তব্য- ‘ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাই না। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077569484710693