বগুড়ার শেরপুরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করার অভিযোগ এনে পরীক্ষা দিতে না দেয়ায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে এক স্কুলছাত্র। শেরউড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির এ ছাত্রের নাম মো. তাছলিমুল ইসলাম (১৪)। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে অচেতন অবস্থায় ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেরউড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এটি গত বুধবারের ঘটনা। জেএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট এর ওইদিন বিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। ওই ছাত্র মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করে। এসময় সে মোবাইল ফোন থেকে পরীক্ষায় নকল করছিল। বিষয়টি শ্রেণি শিক্ষক টের পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপর বিষয়টি আলোচনা-পর্যালোচনা ও প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে বাকি পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে দেয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আর সেই সিদ্ধান্তের কারণে ওই ছাত্রকে পরদিন বৃহস্পতিবার ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি। এরপর হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়লে ওই ছাত্রকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনো দায়িত্বে অবহেলা নেই বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ রেজাউল।
এদিকে উক্ত ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই শিক্ষার্থীর বাবা শেরপুর পৌরশহরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছেলে অপরাধ করলে অভিভাবক হিসেবে তাকে প্রথমে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। কেবল গত বৃহস্পতিবার (১২সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে স্কুল থেকে একটি ফোন পাই। জানানো হয় আপনার ছেলের একটু সমস্যা হয়েছে। তাই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, সেখানে যোগাযোগ করুন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মোবাইল ফোন নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কারণে সহপাঠীদের সামনে তাছলিমুলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন শ্রেণি শিক্ষক। নোংরা ভাষায় তাকে গালি-গালাজসহ পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি চূড়ান্ত বোর্ড পরীক্ষায় (জেএসসি) অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভে-দুঃখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। পরে বিদ্যালয়ে ছাদে গিয়ে বেশ কয়েকটি ঘুমের ট্যাবলেট (চেতনানাশক) খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে সহপাঠীরা তাকে খুঁজতে থাকে। বেশকিছু সময় খোঁজাখুঁজির পর বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার ছেলের কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি।
গত তিনদিন ধরে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সে। ছেলে সুস্থ হলে থানায় লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানান তাছলিমুলের বাবা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।