চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর) ২০১৫-১৬ সেশনের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯ মাস হয়ে গেলেও ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ সেশনের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা এপ্রিলে শুরু হলেও পাঁচটি কোর্সের পরীক্ষা নিয়ে স্থগিত করে দেওয়া হয়। ওই দুই সেশনের ফের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় সেশন জটের কবলে পড়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ওই দুই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, আইইআরের ১৮ জন শিক্ষককে তাঁদের পুরনো কর্মস্থল ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর ওপর উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দেন এবং ওই আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টও। আর এই ১৮ জনের মধ্যে ওই দুই পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আইইআরের সহযোগী অধ্যাপক কাজল বরণ নাথ ও মো. ইফতেখার আরিফ। তাঁদের ক্লাস নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল আটকে আছে এবং তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এখন শিক্ষকেরা ক্লাস নিতে পারবেন না।
দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজটের ওপর ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার ৯ মাসেও রেজাল্ট পাইনি। কিছু দিনের মধ্যে তৃতীয় বর্ষের ফাইনালে বসার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে আমাদের ফলাফল আদৌ প্রকাশ হবে কিনা জানি না। শোনা যাচ্ছে নতুন করে আবার দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার কথা চলছে। আইইআরে কিছু শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রেষারেষিতে আমাদের শিক্ষাজীবন থমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
তৃতীয় বর্ষের পাঁচটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৬ মে পর্যন্ত ৫টি পরীক্ষা হয়। এরপর পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়। ৬ মাস ধরে তাঁরা বসে আছেন। নেই কোনো পরীক্ষা ও নেই কোনো ক্লাস। এ বিষয়ে বারবার উপাচার্যের শরণাপন্ন হলেও কোনো সমাধান আসেনি। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে নতুন করে রুটিন হবে সব পরীক্ষা আবার দিতে হবে।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আইইআর নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দুটি পক্ষ হয়ে গেছে এবং মামলা-মোকদ্দমা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু লোকের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তাদের ইনস্টিটিউটের এই করুণ অবস্থা! কিন্তু তাঁদের রেষারেষিতে আমাদের শিক্ষা জীবন কেন পিষে যাবে?
ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান কাজল বরণ নাথ বলেন, ‘ফলাফল তৈরি করা আছে। আমাদের আগের কর্মস্থলে (আইইআরের শিক্ষক) সপদে পদায়ন করা হোক ও ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। তাহলে কর্তৃপক্ষ যখন ফলাফল চাইবে তখনই দিয়ে দিব।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের নির্দেশ মতে আবার নতুন করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং এর প্রস্তুতি চলছে।’