শিক্ষক ক্লাস নেওয়ার সময় শিশুদের দৃষ্টি শিক্ষক বা বোর্ডের দিকে নয়, তারা তাকিয়ে থাকে উপরে, ভবনের ছাদে- এই বুঝি ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ল। একই অবস্থা শিক্ষকদেরও। এভাবেই দিনের পর দিন আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর ও জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মাঝে-মধ্যেই এ দুটি বিদ্যালয়ের পলেস্তারা খসে পড়ে। তখন আতঙ্কে হুড়াহুড়ি পড়ে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।
সরেজমিন দেখা যায়, ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হওয়া ওসমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০। এই বিদ্যালয়ে পৃথক দুটি ভবন রয়েছে। চার কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ হয় ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। আর দুই কক্ষের আরেকটি ভবন নির্মাণ হয় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে। দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না হওয়ায় ওই চার কক্ষের ভবনের ছাদের অধিকাংশ জায়গায় পলেস্তারা খুলে রড বের হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ফাটল ধরেছে। সেখানেই নেওয়া হচ্ছে ক্লাস।
ওসমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টিতে দুই শিফটে ক্লাস নেওয়া হয়। চার শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্মিত ভবনে। কক্ষের অভাবে পুরনো আরেকটি ভবনে ঝুঁকি নিয়ে শিশু শ্রেণির ৩২ জন এবং পঞ্চম শ্রেণির ৩০ জনের ক্লাস নেওয়া হয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষকদের কার্যালয়ও রয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ভারতী রানী বলেন, কয়েকদিন আগে শিশু শ্রেণির ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ উপর থেকে পলেস্তারা খুলে পড়ে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় দুই শিশু শিক্ষার্থী। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু বানু ও জিনিয়া আক্তার বলে, 'স্যার, ক্লাস করার সময় ছাদের সিমেন্ট-বালু প্রায়ই খুলে পড়ে। এ কারণে বেশিরভাগ সময় পড়া ছেড়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকি।'
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসিরুজ্জামান বলেন, ক্লাস নিতে গিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। আবার অফিসে বসেও ছাদের দিকে তাকাতে হয়। কারণ কখন পলেস্তারা খুলে মাথায় পড়বে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
একই অবস্থা জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৩ জন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে চার কক্ষ ও ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে দুই কক্ষ বিশিষ্ট দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত ভবনটির চারদিকে দেখা দিয়েছে ফাটল। খুলে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। কোথাও কোথাও রড বের হয়েছে। তবুও শ্রেণিকক্ষের অভাবে সেখানে শিশু শ্রেণি, প্রথম শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। তাদের অফিস কক্ষেরও একই অবস্থা।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, যে কোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়তে পারে। এ কারণে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লায়লা আরজুমান বলেন, প্রায়ই ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ে। ক্লাস নেওয়ার সময় আমরা আতঙ্কে থাকি।
বদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জিয়াছমিন সাঈদ বলেন, আমি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। ওই দুই বিদ্যালয়ের কী কী সমস্যা আছে তা দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।