ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় এক পল্লী চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় আসাদুল্লাহ (৯) নামে এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ ঘটনায় চিকিৎসক আবদুল নূর ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা করেছে নিহতের পরিবার। শুক্রবার সকালে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত আসাদুল্লাহ আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ধর্মনগর গ্রামের আল আমিন মিয়ার ছেলে ও কর্মমঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
মামলার এজাহার জানা যায়, বুধবার বিকালে আসাদুল্লাহ খেলতে গিয়ে হাতে ব্যথা পায়। আসাদুল্লাহকে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোসাইস্থল বাজারে পল্লী চিকিৎসক আবদুল নূরের কাছে নিনে যান অভিভাবকরা। তার হাতের এক্স-রে করে দেখার পরামর্শ দেন ওই পল্লী চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার ওই পল্লী চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে শিশুর বাবা আল আমিন কসবা উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে হাতের এক্স-রে করান। এ সময় দেখতে পান শিশুটির হাতের হাড় ফেটে গেছে। হাতে প্লাস্টার করতে হবে।
তখন আবদুল আসাদুল্লাহর বাবাকে বলেন, তিনি অনেক প্লাস্টার করেছেন, এটিও তিনি করতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নূরের ওষুদের দোকানে শিশুটিকে নিয়ে যান তার অভিভাবকরা। হাতে প্লাস্টার করার সময় পরপর কয়েকটি ইনজেকশান পুশ করা হয়। একপর্যায়ে শিশুটি ইনজেকশান পুশ না করতে বললেও ইনজেকশান পুশ করা হয়। ইনজেকশান পুশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটির খিচুনি ওঠে। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি। টের পেয়ে পল্লী চিকিৎসক ও তার সহকারী জালাল মিয়া ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
নিহত আসাদুল্লাহর বাবা আল আমিন মিয়া বলেন, এক্স-রে করে জানতে পারলাম আমার ছেলের হাত ভেঙে গেছে। ভালো হাড় বিশেষজ্ঞ দিয়ে প্লাস্টার করার কথা বললে আবদুল নূর ডাক্তার বললেন, তিনি প্লাস্টার করতে পারবেন। তিনি নাকি আরো অনেক প্লাস্টার করেছেন। প্লাস্টার করার জন্য ২টি ইনজেকশান দিয়েছে। আমার ছেলে ডাক্তারকে বলেছে, আঙ্কেল, আমার হাত ব্যথা করে না। আমাকে আর ইনজেকশান দিয়েন না। আমার বুক ধড়পড় করছে। কিন্তু তিনি আরো একটি ইনজেকশান দেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার ছেলে মারা গেছে বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন শিশুটির বাবা।
কসবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশাদুল ইসলাম বলেন, পল্লী চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় স্কুলছাত্র আসাদুল্লাহ মারা গেছে। স্কুলছাত্রটি মারা যাওয়ার পর থেকে আবদুল নূর ও তার সহকারী জালাল মিয়া পালিয়ে গেছে। নিহতের লাশ প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক আবদুল নূরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।