দুটো হাত থেকেও নেই। স্বাভাবিকের তুলায় অনেক ছোট দুই হাতে কিছু শক্ত করে ধরা যায় না। তবু লেখাপড়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি আরিফা খাতুনকে। পা দিয়ে লেখা অভ্যাস করেছে, একে এক পাস করে এসেছে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি। আর এবার পা দিয়ে লিখে এইএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
দুটি হাতেই জন্ম থেকে অচল তাই পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। পায়ের ফাঁকে কলম ধরে মনোযোগ সহকারে পরীক্ষার খাতায় লিখছে।
লালমনিরহাট মজিদা খাতুন কলেজ থেকে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্রে পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী আরিফা খাতুন। লেখাপড়া শিখে আরিফা শিক্ষক বা আইনজীবী হতে চায়।
আরিফা লালমনিরহাট পৌর এলাকার উত্তর সাপটানা ব্র্যাক স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৪২৫ পায়। এরপর সে মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৪৪ ও এসএসসিতে পরীক্ষায় জিপিএ-৪.১১ পায়।
এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফা সদর উপজেলার ফুলগাছ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এবার এইচএসসি (মানবিক) পরীক্ষা দিচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী আরিফা পরীক্ষা অন্য শিক্ষার্থীদের মতো বেঞ্চে বসে দিতে পারেনি। তার দুই হাত অচল থাকায় সে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়।
আরিফার মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে আরিফা সবার ছোট। জন্মগতভাবে আরিফার দুই হাত বিকলাঙ্গ (অচল, আকারে ছোট ও দুর্বল)। শিশুকাল থেকেই আরিফার পড়াশোনার প্রতি খুব ঝোঁক। আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে, অনেকের সাহায্য-সহযোগিতায় এই অচল মেয়েকে এত দূর এনেছি।’
আরিফার বাবা আবদুল আলী বলেন, আমি শহরের ফুটপাতের একজন তালা-চাবির মেকার, অতি সামান্য আয়। অভাবের কারণে আরিফার জন্মের পর ভালো চিকিৎসা করাতে পারি নাই। অভাবের কারণে আমার অন্য ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে না পারলেও আগ্রহ থাকায় আরিফাকে পড়ানোর চেষ্টা করছি।
আরিফা বলে, সে লেখাপড়া শিখে শিক্ষক বা আইনজীবী হতে চায়। তার গরিব বাবা-মা তাকে আরও অনেক দূর পড়াতে চায়। তার নিজেরও পড়ার আকাঙ্ক্ষা আছে।