পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার বর্ণিল ইতিহাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই। পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শুরু ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ নামকরণ করেন। একসময় এটিই ছিল ঢাকার উচ্চশিক্ষা অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রোববার (২০ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, ২০০৫ সালে ২৭(৪) ধারায় জগন্নাথ কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। তবে ঐ ২৭(৪) ধারা নামক আইনটি ছিল একটি কালো আইন। ঐ আইনটিতে ছিল—বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব অর্থায়নে চলবে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যদি নিজস্ব ব্যয়ে পরিচালিত হতে হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, বেতন, পরীক্ষার ফি ইত্যাদি বৃদ্ধি ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। যা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়ে যেত। সেই অবস্থা থেকে ২৭(৪) ধারা বাতিল করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সম্পূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, বিত্তশালী সকল শ্রেণির ছেলেমেয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্পূর্ণ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মেসে বা ভাড়া বাসায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংকট সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ সালে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতের পড়ালেখার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন থাকলেও বর্তমানে মেধাবীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্বিতীয় পছন্দের বিদ্যাপিঠে পরিণত হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার, শিক্ষাক্ষেত্রে তার যে অভূতপূর্ব অবদান, সেই অবদানের অংশ হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে সমৃদ্ধ করতে ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য এক মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। সেখানে ভূমি উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত সভা-সেমিনার, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, উন্নত পাঠদান, নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষাসহ সেশনজটমুক্ত একটি শিক্ষা পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে। উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় এটি সম্ভব হয়েছে। অতীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রকাশনা ছিল না কিন্তু বর্তমানে নিজস্ব প্রকাশনায় ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে, প্রকাশনার সংখ্যা দিনদিন বাড়বে বলে জানা যায়। বিগত দুই বছর যাবত্ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নিজস্ব স্টল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হাজির হয়—যা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। সমপ্রতি শিক্ষার্থীরাও আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলোতে অংশ নিচ্ছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরান ঢাকায় একটি সাংস্কৃতিক আবহ গড়ে তুলেছে যা পুরান ঢাকার অনন্য প্রাপ্তি। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচ-গান, যাত্রাপালা পরিবেশনার মাধ্যমে পুরান ঢাকাকে একটি জাঁকজমক পরিবেশ প্রদানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে পদার্পণ করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সর্বোপরি সাবেক-বর্তমান সবাইকে নিয়ে দিনটি মিলনমেলায় পরিণত হোক এবং আগামীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত শিরে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হোক প্রতিষ্ঠা দিবসে এমন প্রত্যাশাই করি।
মো. আহসান হাবিব : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।