'মারধরের সময়ে আবরার পানি খাইতে চাইছিল, কিন্তু ওকে পানি দেওয়া হয় নাই। আমরা ভাইদের বলেছিলাম হাসপাতালে নিয়া যাইতে। ভাইরা তাও নিতে দেয় নাই।' বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি এ এস এম নাজমুস সাদাত এভাবেই সেই ভয়ঙ্কর রাতের বিবরণ দিয়েছে। গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার পুলিশ তাকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে। শুনানির আগে আদালতের হাজতখানা থেকে কাঠগড়ায় নেওয়ার সময়ে উপস্থিত সাংবাদিক ও আইনজীবীদের এ কথা বলে সাদাত।
সাদাত জানায়, অনিক সরকার, সকাল, মোজাহিদ, মনির ভাইসহ ১৫ ও ১৬ ব্যাচের ভাইরা বেশি মেরেছে আবরারকে। ১৬ ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনিরের নির্দেশে তারা আবরারকে রুম থেকে ডেকে আনে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সে ২০১১ নম্বর রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার দিনাজপুরের বিরামপুরের হিলি সীমান্ত-ঘেঁষা একটি গ্রাম থেকে সাদাতকে গ্রেফতার করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নেওয়া হয়। ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে শিবির সন্দেহে তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ যাচাই করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। একপর্যায়ে তাকে বেদম মারধর করা হয়। রাত ৮টা থেকে আনুমানিক দেড়টা পর্যন্ত আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প ও রশি দিয়ে দফায় দফায় পেটানো হয়। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র সাদাত ওই মামলার ১৫ নম্বর আসামি।
আবরার হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চার আসামি এজাহারের বাইরে। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছয় আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ১৬ জন কারাগারে থাকলেও চার আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ভিকটিমসহ মামলার বিভিন্ন আসামির কাছ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইল, সিসিটিভি ডিভিআরসহ বিভিন্ন ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সময়ে কয়েক আসামির মেসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথনের স্ট্ক্রিনশট পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, সাদাত জয়পুরহাট সদর উপজেলার কড়ই উত্তরপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে। সরকারি স্কুলের শিক্ষক হাফিজুর পরিবার নিয়ে রাজশাহীতে থাকেন। তবে সাদাতের দাদা ও অন্য চাচারা পরিবার নিয়ে জয়পুরহাটেই থাকেন। সাদাত বুয়েটে ছাত্রলীগের কর্মী হলেও স্থানীয়রা বলছেন, তার পরিবার জামায়াত সমর্থিত।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সাদাত। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিসহ ২০১৫ সালে রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাসসহ রাজশাহী বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০১৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএসহ রাজশাহী বোর্ডে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রুয়েট, কুয়েটে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও শেষ পর্যন্ত বুয়েটেই যন্ত্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়।