পারমাণবিক অভিযাত্রায় বাংলাদেশ - Dainikshiksha

পারমাণবিক অভিযাত্রায় বাংলাদেশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ারও ১০ বছর আগে। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পদ্মা নদীর তীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে প্রকল্পের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর দুরভিসন্ধিতে বাঙালির স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর সীমিত সম্পদের মধ্যেও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় প্রকল্প পরিচালক বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়াকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছিল। দুই দফা সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও অর্থের যোগান না থাকায় প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন এস এম রওনক রহমান আনন্দ।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সুপারিশ করা হয়েছিল। তৎকালীন পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ ওয়াজেদ মিঞার নির্দেশনায় প্রকল্প বাস্তবায়নে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যানের অনুমোদন দেয়া হয়। ক্ষমতার পালাবদলে আবারও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে যায়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এর ভিত্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সমঝোতা স্মারক’ ও ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে পাবনার রূপপুরে দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ এবং প্রকল্প গ্রহণের ৫৭ বছর পর ৩০ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নকামী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নিজ হাতে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর জন্য প্রথম কংক্রিট ঢালাই/মূল নির্মাণ কাজ এবং ১৪ জুলাই ২০১৮ দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই/মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৩২তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ শক্তি উত্পাদনকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয়। চুক্তি অনুযায়ী এফসিপি উদ্বোধনের দিন থেকে ৬৩ মাসের মধ্যে এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হওয়ার কথা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঈশ্বরদীর পদ্মার পাড়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এটি শেখ হাসিনার ১০ অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্পের একটি। সবকিছু ঠিকমতো চললে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই ইউনিট থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশি কর্মী মিলে প্রায় ১ হাজারের বেশি কর্মী দিন-রাত কাজ করছেন। এ প্রকল্পের জন্য থ্রি প্লাস রিঅ্যাক্টর বসানো হচ্ছে। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি। যা শুধু রাশিয়ার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে বাংলাদেশের রূপপুরেই বসানো হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে মূল স্থাপনার কাজ চলছে পুরোদমে। এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? আর কতটুকুই বা নিরাপদ? জাপানের ফুকুশিমা আর চেরনোবিল দুর্ঘটনার ভয়াবহতা নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এনেছে। জনগণের জন্য কোনো ঝুঁকি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে গ্রহণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রশিক্ষিত আলাদা একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে রাশিয়া এবং ভারতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখেই বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া তাদের সর্বশেষ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ভিভিইআর ১২০০ মডেলটি বাংলাদেশে দিচ্ছে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে সর্বশেষ আধুনিক এই মডেলটির। এছাড়া রোসাটমের তথ্য অনুযায়ী এই মডেলটি যে কোনো ধরনের বিমান হামলা থেকেও রক্ষা পেতে সক্ষম। জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনা করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের বর্জ্য রাশিয়া তাদের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ফেরত নিয়ে যাবে। আর নিরাপদ ও নির্ভরশীলতার ব্যাপারে রাশিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক মান নির্ণয়কারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির মান অনুযায়ীই তৈরি করা হয়েছে। তাই রাশিয়াকে উন্নত পরমাণু শক্তির পথিকৃৎ বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই রাশিয়া তার সর্বশেষ মডেলের আধুনিকায়ন করে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। দেশের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক, এটা আমরা চাই। বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068159103393555