প্যানেল ছাড়া উপাচার্য নিয়োগ নিয়েই সংকট - দৈনিকশিক্ষা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়প্যানেল ছাড়া উপাচার্য নিয়োগ নিয়েই সংকট

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ বুধবার থেকে সব ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আর এতে ভর্তি কার্যক্রম নিয়েও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলেও চলমান আন্দোলনের কারণে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি। বুধবার (৬ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও শুভ আনোয়ার।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদেরও প্রায় দেড় বছর পার করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর নিয়োগের আগে সিনেট নির্বাচনের পর থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। মূলত প্যানেল ছাড়া উপাচার্য নিয়োগ নিয়েই সংকটের শুরু। তবে শিক্ষকদের একটি অংশকে বাদ দিয়ে একপেশে  মহাপরিকল্পনা (উন্নয়ন), গাছ কাটা, দরপত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েই দানা বেঁধেছে আন্দোলন।

জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের চারটি গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থী গ্রুপ দুটি, যাদের একাংশ উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সঙ্গে রয়েছে। তারা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের অপরাংশ (যারা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী), বিএনপিপন্থী শিক্ষক গ্রুপ ও বামপন্থী শিক্ষকরা মিলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে, ফারজানা ইসলামের প্রথম মেয়াদ শেষের দিকে সিনেট নির্বাচন হয়। সেখানে শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষকরা এগিয়ে যান। তাঁরা ভেবেছিলেন, এখন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হলে তাঁদের গ্রুপের শিক্ষকরাই উপাচার্য হবেন। কিন্তু তখন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ছাড়াই ফারজানা ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান। তখন থেকেই উপাচার্য পদ নিয়ে মূলত আন্দোলনের সূত্রপাত।

জানা যায়, উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য হতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন, যদিও তিনি সরাসরি আন্দোলনের মাঠে নেই। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খবির উদ্দিন ও প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার উপাচার্য হতে চান। তাঁরা সবাই শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষক।

আর উপাচার্য ফারজানার সঙ্গে যাঁরা আন্দোলনের বিপক্ষে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মান্নান চৌধুরী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হানিফ আলী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এ মামুন অন্যতম। 

কিন্তু গত আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে হল নির্মাণ ও গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। উপাচার্যের পক্ষে থাকা শিক্ষকরা চান বর্তমান উপাচার্যের সময়েই এই কাজ শেষ করতে। আর শরীফ এনামুলের অনুসারী আওয়ামী, বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা তাতে রাজি নন। তবে এই আন্দোলনের মধ্যেই দরপত্রসংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসে। তখন আন্দোলন আরো দানা বাঁধে, যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

সব শেষে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্য ফারজানার ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রায় আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছে। এমন অভিযোগের তদন্তের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরবর্তী সময়ে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে পরিণত হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে তাঁরই বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করার ব্যাপারে বৈঠক করেন। কিন্তু এতে উপাচার্য রাজি না হওয়ায় ১০ দিন ধরে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং নবম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকলেও ধর্মঘট উপেক্ষা করে বিভিন্ন বিভাগের উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে গত রবিবার বৈঠক করেছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সোমবার ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন তখন বলেন, ‘আমরা বর্তমান উপাচার্যের দুর্নীতি, অনিয়ম, অযোগ্যতা, একগুঁয়েমি ও অগণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিষয় ও প্রমাণ তুলে ধরি। শিক্ষামন্ত্রী এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন বলে জানান।’

তবে গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরের দিকে তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, এই হামলায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে এর পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এই হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনে যোগ দেন।

উপাচার্যপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ এ মামুন বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ঠিকমতো চলুক, গবেষণা ঠিকমতো চলুক, পরীক্ষা ঠিকমতো চলুক। এটা ৯৮ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরও চাওয়া-পাওয়া। যারা আজ আন্দোলনে নেমেছে তারা কি তদন্ত চায়, না উপাচার্যের পদত্যাগ চায়। তদন্ত চেয়ে তো উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ বলা যাবে না। আমরা যেহেতু শুনেছি শিক্ষামন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, এ জন্য কয়েক দিন আমরা কোনো কর্মসূচি দিইনি। আমাদের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও তারা বসার সুযোগ পেয়েছে এবং আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’

উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘উপাচার্য বল প্রয়োগ করছেন। আর এর বহিঃপ্রকাশ হলো ছাত্রলীগ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে হামলা। এই বল প্রয়োগের ভেতর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিল। এগুলো সবই হচ্ছে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা। তবে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে। বল প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানো যাবে না। আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় আছি।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0082979202270508