ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আসন্ন। এ মুহূর্তে প্যানেল চূড়ান্ত করতে কাজ করছে ছাত্রসংগঠনগুলো। তবে এখন পর্যন্ত প্যানেল ঠিক করতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগে। ছয় মাস ধরে কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ছাত্রত্ব থাকা ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতাই ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। তাঁরা চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ জোরেশোরেই। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এই অবস্থায় প্যানেল চূড়ান্ত করতে দলীয় সিদ্ধান্ত জানতে গণভবনের দিকেই তাকিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ছাত্রত্ব থাকা সাবেক কমিটির নেতাকর্মীরা বেশি আগ্রহী ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেউ কেউ। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রত্ব থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও হল পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরে। দলীয় প্যানেলে ঠাঁই পেতে প্রচারণা ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
তবে দল থেকে দেওয়া প্যানেলে ঠাঁই না পেলে দলীয় প্রার্থীর অধীনেই কাজ করবেন এমনটিও বলছেন সবাই। এরই মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ না করা অনেকে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখছেন। এ তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সময় দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। তবে ছাত্রত্ব থাকা বেশির ভাগ নেতাই প্রার্থী হতে চাওয়ায় প্যানেল চূড়ান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় প্যানেল চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। দল থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে বা প্যানেল ঠিক করে দিলে সেই অনুযায়ীই কাজ করবেন তাঁরা। ইতিমধ্যে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে
ছাত্রলীগের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) আখতারুজ্জামান।
জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও হল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করব। তাঁদের কাছ থেকে প্যানেল ও প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হবে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে।’
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, প্যানেলে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া টিএসসিভিত্তিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলছেন তাঁরা। দলে ভেড়াতে টার্গেট করছেন পাহাড়ি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও। স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করতে ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ২০ দফা দাবি দেওয়া হয়েছে। হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ভোট পেতে পরিবহন সংকট কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বাসের রুট বৃদ্ধিসহ নানা দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
জানতে চাইলে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, ‘বয়স আছে ছাত্রলীগের এমন সব নেতাই প্রার্থী হতে চান। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চান না। এভাবে চলতে থাকলে প্যানেল চূড়ান্ত করা অসম্ভব। জেতার মানসিকতা থাকলে যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দিতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আপার (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে সবাই।’
প্যানেলের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘প্যানেল নিয়ে প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তবে এই বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানি না। এক ধরনের অন্ধকারে রয়েছি।’