কুমিল্লার হোমনায় স্বাক্ষর জাল করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি তিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
ঘটনার শিকার তিন শিক্ষার্থী মো. নুর নবী, মো. আজিজুল হক ও মো. রাব্বী।
উপজেলার আসাদপুর হাজী সিরাজ-উদ-দৌল্লা ফারুকী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেছেন তিন ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তিন শিক্ষার্থী তাদের টাকা ফেরত চেয়ে এই ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর জাল করে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে তাদের নামীয় ৭ হাজার ২০০ টাকা করে ৩টি চেক গ্রহণ করে সোনালী ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করেন।
চেক বিতরণ শিটে যে স্বাক্ষর রয়েছে এটি তাদের স্বাক্ষর নয় বলে ছাত্ররা অভিযোগে উল্লেখ করে। তাদের নামের ৭ হাজার ২শত টাকা করে উত্তোলন করা হলেও তাদের মাত্র ২ হাজার টাকা করে দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন। বিষয়টি জানার পর টাকা ফেরত পেতে প্রতিবন্ধী তিন শিক্ষার্থী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।
শিক্ষার্থী মো. নুর নবী বলে, ‘আমি ৪ বছর যাবৎ ভাতা পেয়ে আসছি। কিন্তু কোনো বছর আমি আমার পুরো টাকা পাইনি। ২ হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছি। গত ২৮ ফেব্রয়ারি আমার ভাতার টাকা ইমরান নামের আরেক শিক্ষার্থীকে দিয়ে আমার হেডমাস্টার স্যার উত্তোলন করেন এবং আমাকে ২ হাজার টাকা দেন। পরে আমি বিষয়টি জানতে পেরে আমিসহ তিনজন ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি। অভিযোগ করার পর হেড স্যার আমার বাড়িতে এসে আমার বাকি টাকা ফেরত দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি টাকা উত্তোলন করিনি। অফিস সহকারী টাকা উত্তোলন করেছেন। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। তারা তাদের টাকা পেয়ে গেছে। সমাজসেবা অফিসার তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করছেন।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী রোস্তম আলম স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। সভাপতি হিসেবে যতটুকু ক্ষমতা আছে, সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অফিস সহকারী আবদুল আজিজ তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি হচ্ছি হুকুমের গোলাম। প্রধান শিক্ষক আমাকে যেভাবে বলেন, আমি সে অনুযায়ী কাজ করি। আমি টাকা তুলে প্রধান শিক্ষকের কাছে দিয়েছি। স্যার কীভাবে বিতরণ করেছেন তা তিনিই জানেন। ছাত্ররা অভিযোগ করার পর তিন জনকে আটত্রিশ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রমজান আলী বলেন, ‘চেক বিতরণের সময় প্রতিস্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ইএনও স্যার আমাকে বিষয়টি তদন্ত করতে দিয়েছেন। যথাযথভাবেই তদন্ত করা হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’