কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চুরি হওয়া টিনের ছবি তুলতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে স্থানীয় চার সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৫ জুন) বিকেলে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামের ওই প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছিত হওয়া সাংবাদিকরা হলেন, দৈনিক শিক্ষা ও দৈনিক জনতার রৌমারী উপজেলা প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন সাখা, দৈনিক ভোরের কাগজের উপজেলা প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ রুবেল, দৈনিক আলোকিত সকালের উপজেলা প্রতিনিধি লিমন আহমেদ ও সাংবাদিক নাহিদ।
স্থানীয়রা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ৫০ হাত ঘরের টিন চুরি হওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুক্রবার (৫ জুন) বিকেলে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে স্কুলের চুরি হওয়ার টিনগুলো রয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় চারজন সাংবাদিক স্কুল ঘরের চুরি হওয়া টিনের ছবি তুলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বাড়িতে যান। এ সময় চুরি হওয়া টিনগুলো পাওয়া যায়। চুরি হওয়া টিনগুলো ছবি তুলতে গেলে প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের উপর মারমুখী হয়ে ওঠেন। প্রধান শিক্ষক, তার স্ত্রী, ছেলে এবং ভাতিজা ওই চার সাংবাদিককে বাড়িতে আটকে রাখার হুমকি দেন। পরে প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের শান্ত হওয়ার কথা বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান। কিন্তু শান্ত না হয়ে আরও ক্ষিপ্ত হন তারা। পরে ওই গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি আমির হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মতিয়ার রহমানসহ আরও অনেকে ঘটনাস্থল থেকে চার সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন।
ওই চার সাংবাদিক তাৎক্ষণিকভাবে, লাঞ্ছিত ও স্কুল ঘরের টিন চুরির বিষয় রৌমারী ইউএনও আল ইমরানকে মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থল থেকে জানালে ঘণ্টাখানেক পর সহকারীই কমিশনার (ভূমি) মো. গোলাম ফেরদৌস ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোক্তার হোসেনসহ রৌমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে না গিয়ে স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে বসে মিটমাট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় চার সাংবাদিক লাঞ্চিতের বিষয় জানালে তা আমলে না নিয়ে চুরির পক্ষে কথা বলেন উপস্থিত একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে টিন রয়েছে। তবে কমিটিরও রেজুলেশন রয়েছে। এতে কিছু করার নেই। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, স্কুলের সবকিছু প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। এইটা ধরার শুধু এখতিয়ার রয়েছে ম্যানেজিং কমিটির।’
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. গোলাম ফেরদৌস দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের সাথে যে খারাপ আচরণ করেছে তা মোটও ঠিক হয়নি। কারণ সাংবাদিকরা প্রতিটি ঘটনার সত্য উৎঘাটন করে করেন।
চার সাংবাদিক লাঞ্ছিতের বিষয় জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিুযক্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, ‘সাংবাদিকদের আমি লাঞ্ছিত করিনি। তবে স্কুলের টিন চুরির অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে সঠিক নয়। রেজুলেশন করে টিন কিনে নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা নেই।’
তবে ওই রেজুলেশনের বিষয় কিছুই জানেন না বলে দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান হাদি, হাজি আব্দুল জব্বার, মজারত আলী ও স্কুলের সহকারী শিক্ষকরাও।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, বিষয়টি মীমাংসা করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারসহ রৌমারী থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বিষয়টি আগামীকাল জানা যাবে।