দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকারও অত্যন্ত জরুরি, যা শেখ হাসিনা সরকারের আছে। তবে এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ মুখ্য। আইন প্রয়োগের দায় শুধু সরকারের নয়, জনগণেরও। দুর্নীতি দমনে সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বুধবার (২২ মে) নবম বিসিএস ফোরাম ও জাইকা বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত “সুশাসন ও জাতীয় উন্নয়ন” শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য এখন বাংলাদেশের সামনে। এ লক্ষ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, বর্তমানের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। তরুণ সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও বেকারত্ব দূর করতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন নতুন বাজারও খুঁজে দেখতে হবে।
অতীতের তুলনায় সকল ক্ষেত্রে সুশাসন বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ফলে সরকারি দপ্তরের কাজের দক্ষতা দুইই বেড়েছে। ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অহেতুক কালক্ষেপণ এবং কাজের জটিলতা হ্রাসে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসনের সকল স্তরে ই-গভর্নেন্স চালু করেছে। তিনি মানসম্মত সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ মি. হিতোশী হিরাটা। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নবম বিসিএস ফোরামের সভাপতি,অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। বেড়েছে মাথা পিছু আয়। মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। বৃদ্ধি পেয়েছে গড় আয়ু। পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে বিদ্যুৎ। বৈদেশিক বিনিয়োগও বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়ার প্রভূত প্রশংসা করছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, গত কয়েক দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ খাত অবদান রাখছে। এগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, রেমিট্যান্স, কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ। আগামীর শ্রমশক্তিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি, আঞ্চলিক সুসম্পর্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাইকার চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ মি. হিতোশী হিরাটা বলেন, রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় সংহতি পারস্পরিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া। সুশাসনের জন্য প্রয়োজন উন্নয়নমুখী, কল্যাণমূলক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ গড়ে তোলা।
তিনি আরও বলেন, জাইকা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার সংস্থা এই দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নিয়ত সহায়তা দিয়ে যাবে।
মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা। তবে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ব সমাজে এখন প্রশংসিত। জনগণ এর সুফল পাচ্ছে। আগামীতেও জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরিুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে।
সেমিনারে নবম বিসিএস ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত বিশেষ প্রকাশনা অভিযাত্রার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ।