এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে সন্দেহের তীর সরকারি মুদ্রণালয় বিজি প্রেসের দিকেও আছে। হাইকোর্ট গঠিত প্রশাসনিক কমিটির সদস্যরা এমন তথ্য দিয়েছেন। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বি জি প্রেস সংস্কারের ব্যাপারে কমিটি সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে। কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হবে আগামী ২৭ মার্চ।
কমিটির চতুর্থ বৈঠক রোববার বুয়েটে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। বৈঠকে কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য যোগ দেন।
এ ব্যাপারে ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘রোববারের বৈঠকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও বিজি প্রেস পরিদর্শনে সদস্যদের পর্যবেক্ষণে যেসব ত্রুটি ও দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। সেসব বিষয়ের ওপর মূল্যায়ন করে করে আমরা কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। প্রশ্নফাঁসের সম্ভাব্য জায়গাগুলো শনাক্ত করার ব্যাপারে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।’
প্রশ্ন প্রণয়ন এবং মুদ্রণ উভয় প্রক্রিয়াতেই কমিটি এখন পর্যন্ত বেশকিছু ত্রুটি পেয়েছে কমিটি। প্রশ্ন প্রণয়নকালে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রশ্ন প্রণেতা বা পরিশোধনকারী বই ও কাগজ-কলম ছাড়া অন্য কিছু নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে ঢুকতে পারেন না। কিন্তু ‘অন্যকিছু’ আসলেই নেন কিনা, সেটা নিরীক্ষার যথাযথ পদক্ষেপের ঘাটতি আছে। অপরদিকে বিজি প্রেসে প্রশ্ন মুদ্রণকাজে প্রায় আড়াইশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা আছে। এমন গোপনীয় ও স্পর্শকাতর কাজে এত লোকের সম্পৃক্ততা গোপনীয়তা নষ্ট করতে পারে। এটি একটি বড় সমস্যা হিসেবে কমিটির সদস্যদের কাছে চিহ্নিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, কমিটি এর বাইরে পরীক্ষা কেন্দ্র, ট্রেজারি, ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানো, কেন্দ্রে সুরক্ষার কার্যক্রমও পর্যালোচনা করছে। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রামপর্যায়ে পরীক্ষা কেন্দ্র বিস্তারের বিষয়টিও প্রশ্নফাঁসের ক্ষেত্রে সহায়ক বলে মনে করছেন কমিটির সদস্যরা। তারা মনে করেন, অনেক স্থানে বেপরোয়া নকল হয়। নকলের সুবিধার্থে একশ্রেণীর শিক্ষক যদি কেন্দ্রের বাইরে প্রশ্ন পাঠিয়ে থাকেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেটা বিচিত্র নয়। তাই কেন্দ্র উপজেলা সদরের মধ্যে সীমিত রাখার প্রয়োজনীয়তাও দেখছেন কমিটির সদস্যরা।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় একটি রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ১৫ ফেব্রুয়ারি দুটি কমিটি গঠন করে দেন। এর একটি বিচারিক অপরটি প্রশাসনিক কমিটি। প্রশাসনিক কমিটি ৬ মার্চ কাজ শুরু করে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কমিটি।
ছয় সদস্যের কমিটিতে আছেন বুয়েটের সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সোহেল রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ, সফটওয়্যার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রতিনিধি শাহরুখ আহমেদ এবং পুলিশের সিআইডির একজন সদস্য।