প্রাথমিকে ৯০ : মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ পাঠ্যবই প্রস্তুত - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকে ৯০ : মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ পাঠ্যবই প্রস্তুত

রাকিব উদ্দিন |

বিনামূল্যে প্রাথমিক স্তরের সব বই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় পৌঁছে গেছে। গতকাল এসব বই বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিন্দ্র কুমার মন্ডল। এ সময় শিক্ষা বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দেশের প্রায় সকল উপজেলায় পৌঁছে গেছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৩২ কোটির বেশি বই স্কুল পর্যায়ে বিতরণের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এবার সাফল্যের সঙ্গে সময়মতো সব বই মুদ্রণ সম্ভব হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

এনসিটিবি জানায়, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪২৮ কপি এবং প্রাথমিক স্তরের বই ১১ কোটি ছয় লাখ এক হাজার ৫২১ কপি।

গতকাল নাগাদ প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৯৮ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৮৫ শতাংশ পাঠ্যবই ছাত্রছাত্রীদের বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কোন কোন উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের চাহিদা অনুযায়ী সব বই পৌঁছে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পাঠ্যপুস্তক কার্যক্রম সরেজমিন খোঁজখবর নিতে আজ রাজধানীর কয়েকটি ছাপাখানা পরিদর্শন করবেন।

বই মুদ্রণ ও বিতরণ কার্যক্রম সম্পর্কে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল  বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কোটি বই ছাপা সম্পন্ন হয়েছে। এসব বই উপজেলা পর্যায়ে বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে। সুখপাঠ্যকরণ বইগুলোও গ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাপা সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তিনি জানান, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন। আর ১ জানুয়ারি দেশের সকল শিক্ষার্থী উৎসবের মাধ্যমে বিনামূল্যে পাঠ্যবই হাতে পাবে। এই উৎসব পালনের পুরো প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল হক জানান, উপজেলার ৬৫০টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বইয়ের সবই উপজেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ বই স্কুল পর্যায়ের বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হাতে চাহিদা অনুযায়ী বই বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি স্কুলের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেবেন শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবম শ্রেণীর ‘সুখপাঠ্যকরণ’ নামে সংশোধন করা ১২টি বইয়ের মুদ্রণ কার্যক্রম পিছিয়ে রয়েছে এসব বইয়ের বাঁধাই ও ব্যবহৃত কালির মানও ভালো হচ্ছে না। এজন্য এসব বই মুদ্রণের কাজ যারা পেয়েছে সেসব ছাপাখানায় শিক্ষামন্ত্রীকে পরিদর্শনের জন্য নেয়া হচ্ছে না। মন্ত্রী যেসব ছাপাখানা পরিদর্শন করবেন সেগুলোর প্রায় শতভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা জানিয়েছেন।

পাঠ্যবইয়ে নিম্নমানের কাগজ ও কালি ব্যবহারের বিষয়ে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা নিম্নমানের কাগজে বই ছেপেছে তাদের বই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পুনরায় ছেপে তাদের কাছ থেকে ভালোমানের বই আদায় করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের জরিমানাও গুণতে হবে।’

দু’একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করেছে জানিয়ে অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘যেখানেই আমরা ছিঁড়ে-ফাড়া বইয়ের খবর পাচ্ছি, সেগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। পরবর্তীতে ভালোমানের বই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

নির্ধারিত সময়ের আগেই বই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহ করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির নেতারা। তাদের দাবি, এবার বিদেশের কোন প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ না পাওয়া দেশীয় ছাপাখানার মালিকরা সম্মিলিতভাবে তা সম্পন্ন করছেন।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান গতকাল বলেন, ‘এবার বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পায়নি। বই মুদ্রণের পুরো দায়িত্বই পরেছে আমাদের ওপর। এজন্য নিজ দায়িত্ব থেকেই আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই বই ছাপা, বাঁধাই ও বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সফলতার সাথে সক্ষম হয়েছি।’

দেশের ছাপাখানার উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাগজ মিলের সক্ষমতা বেড়েছে, এর সম্প্রসারণ ঘটেছে, আমাদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। এজন্য অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এবার কম সময়ের মধ্যে সব বই ছাপাতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি আগামীতেও বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের বই মুদ্রণের কাজ পাবে না।’

পুরো বই মুদ্রণ কার্যক্রম তদারক করছেন এনসিটিবি’র মোট ১৮টি কমিটি। এর একটি কমিটির আহবায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল  জানান, তাদের তদারকির আওতাভুক্ত প্রায় দুই কোটি বইয়ের প্রায় ৯৯ শতাংশ ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলে সরবরাহ করা হয়েছে।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণীর ১২টি পাঠ্যবই ‘সুখপাঠ্যকরণ’ নাম দিয়ে সংশোধন করে নতুনরূপে ছাপা হচ্ছে। তবে যেসব বইয়ের কনটেন্টে সাম্প্রদায়িকরণের অভিযোগ উঠেছিল, সেগুলোতে কোন পরিবর্তন আসেনি। ১২টি বই হলো- বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা, উচ্চতর গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, অর্থনীতি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং হিসাববিজ্ঞান বই।

এই ১২টির মোট এক কোটি ৯৮ লাখ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। মোট ১০২টি লটে এসব বই ছাপা হচ্ছে। এই বইয়ের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে এনসিটিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

৩২টি অযোগ্য ও অস্থিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে এসব বই ছাপার কার্যাদেশ দেয়ার অভিযোগ করে আসছিল মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা। এই অভিযোগে তারা কিছুদিন সারাদেশে বই মুদ্রণের কাজ বন্ধও রাখেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার দায়িত্বে থাকা ‘বিতরণ নিয়ন্ত্রক’ ফরহাদুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘সুখপাঠ্যকরণের’ বই মুদ্রণ আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। মাধ্যমিকের অন্যান্য বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’

জানা গেছে, এবার মোট ৫টি টেন্ডারে (দরপত্র) ভাগ করে বই ছাপা হচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরের বইসহ মাদ্রাসার দাখিল ও এবতেদায়ি স্তরের বই নিয়ে আলাদা টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

 

সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042839050292969