প্রাথমিকের ছুটি তালিকা সংশোধন প্রসঙ্গে - Dainikshiksha

প্রাথমিকের ছুটি তালিকা সংশোধন প্রসঙ্গে

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

শিক্ষার্থীদের ছুটি নিয়ে কী যে আনন্দ, তা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

“মেঘের কোলে রোদ হেসেছে
 বাদল গেছে টুটি
 আজ আমাদের ছুটি ও ভাই
 আজ আমাদের ছুটি।”

বিদ্যালয়ের ছুটির ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে কার আগে কে ছুটবে এ উল্লাস চিরন্তন। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় থাকে কখন ছুটি হবে। অথচ প্রাথমিকের বাৎসরিক ছুটির তালিকায় ছুটি দেখিয়ে তাদের টেনে হেঁচড়ে বিদ্যালয়ে এনে ছুটির আনন্দকে মাটি করে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকের ছুটির তালিকা এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অধিকার খর্ব করার শামিল। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের কাছে মোটেই এটা কাম্য নয়। মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের কাছে প্রত্যাশা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমন্বিত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সুযোগ দিন।
 
যুগ যুগ ধরে প্রাথমিকের ছুটির তালিকায় বছরে ৭৫ দিন ছুটি থাকছে। উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮৫ দিন ছুটি। শিশু শিক্ষার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের বেশি ছুটি প্রত্যাশা নয়। আমাদের চাওয়া ৭৫ দিন ছুটি সমন্বয় করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলা ও শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত করা। ছুটির তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে উপরিউক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের অভিপ্রায়ে কতিপয় সুপারিশ,

 মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠুক:
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধ তথা দেশের সংগ্রামী ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে। ইতিহাস, ঐতিহ্য জানার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস, বাঙ্গালির ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষসহ দিবসগুলো বিদ্যালয় সকল কর্মদিবসের মত খোলা রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ শিশুদের অভিনব কায়দায় দেশকে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ছুটির তালিকা দিবসগুলোকে তালিকায় ছুটি রাখা হয়েছে। তালিকার নিচে যথাযথ মর্যাদায় দিবসগুলো পালনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। ছুটির তালিকায় ছুটি থাকলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিত থাকা বাধ্য নয়। কর্মদিবসে ছাত্র হাজিরার নাম ডেকে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব। যেহেতু শিক্ষকেরা সরকারি কর্মচারী। সেহেতু তারা স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে উপস্থিত করে দায় এড়ানোর মত দিবসগুলো পালন করেন। ছুটি থাকায় শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে হয় না। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ শিক্ষক ছুটির দিনে দিবস পালনে বিরূপ মনোভাব নিয়ে কাজ করে থাকেন।

এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীকে দিবসগুলো কেন, কী ঘটনা প্রেক্ষাপটে পালন হচ্ছে, বিশদভাবে শ্রেণিওয়ারী জানানো প্রয়োজন। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠা ও দেশের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে ছুটিগুলো বাতিল করার সবিনয় নিবেদন করছি।

 প্রাথমিক শিক্ষকেরা অধিকার থেকে বঞ্চিত:
সকল কর্মচারীর মত প্রাথমিক শিক্ষকদেরও ৩ বছর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তির অধিকার। সকল কর্মচারী শ্রান্তি বিনোদন ভাতার ১ মাসের মূল বেতনের সাথে ১৫ দিনের বাড়তি ছুটি পান। প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ শিশু-শিক্ষার্থীর স্বার্থে অতিরিক্ত ১৫ দিনের ছুটি দাবি করছে না। প্রাথমিক শিক্ষকেরা সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার কর্মরত থাকায় তাদের ছুটি সরকারি কর্মচারীদের চেয়েও কম। প্রতি বছরের মতো ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে যেকোন অবকাশে শ্রান্তি বিনোদনের জন্য ১৫ দিন ছুটি রাখা হয়নি। বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসের ছুটি থেকে ১৫ দিন শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি দেখিয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দপ্তর থেকে বিল পাস করানো হয়। হিজরি বছর ৩৫৫ দিন বিধায় ৩ বছর রমজানের ছুটি ৩০ দিন আগে আসে বিধায় শিক্ষকেরা ৪/৫ বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পান।

এ সংকট নিরসনে নিবেদন রমজানের মাস ছাড়া যে কোন পর্বে জাতীয় ও বিশেষ দিবসের ছুটিগুলো যোগ করে ১৫ দিন ছুটি রেখে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পর পর পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা হোক।

 প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি:
প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি অনেকটা পায়ে বেড়ি লাগানোর মতো। সংরক্ষিত ছুটি সাধারণত: তাৎক্ষনিক বিশেষ কারণে দেওয়া হয়ে থাকে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক/বিশেষ ব্যক্তির মৃত্যু বা তাৎক্ষনিক কোন ঘটনা, ক্রীড়া, পিকনিক ইত্যাদি কারণে সংরক্ষিত ছুটি দেওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।  থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিস বিদ্যালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত নয় বিধায় সংরক্ষিত ছুটি অনুমোদন তাৎক্ষনিক সম্ভব নয়। অনুমোদনের পরিবর্তে অবহিত করা উল্লেখ থাকলে টেলিফোনের মাধ্যমে অবহিত বা পরবর্তীতে আবেদনের মাধ্যমে অবহিত করা সম্ভব। অনুমোদন শব্দ জুড়ে দেওয়া প্রয়োজনের সময় নেওয়ার পূর্বে ছুটি তামাদি হয়ে যায়। ছুটির তালিকা অনুযায়ী বাস্তবে সংরক্ষিত ছুটি দেয়ার ক্ষমতা উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তার । 

 দূর্গাপূজার ছুটি:

২০১৯ খ্রিস্টাব্দে দূর্গাপূজার ছুটি ৩ দিন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গাপূজা সাধারণত ৫ দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিক্ষকদের মাঝে এ ছুটি নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ছুটির পরিমাণ বৃদ্ধি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্ষোভ লাঘব প্রত্যাশা করছি।

উপরিউক্ত বিষয়ের প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও বিশেষ দিবসের বিদ্যালয়ের ছুটি বাতিল, যে কোন অবকাশে ১৫ দিন ছুটি রেখে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি অনুমোদনের পরিবর্তে অবহিত শব্দ সংযোজনসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গাপূজার ছুটি বৃদ্ধি করে ছুটির তালিকা সংশোধন হোক প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের চাওয়া। 

লেখক: আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044858455657959