রাজধানীর মতিঝিলে এক স্কুলছাত্রীকে বাসায় ঢুকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ওই ছাত্রীর নাম জয়া মণ্ডল। সে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবা গোপাল মণ্ডল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিদর্শক। তার মাও দুদকে কর্মরত। বাসা মতিঝিল এজিবি কলোনিতে। বৃহস্পতিবার ৭৯/৩ নম্বর এজিবি কলোনির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে নিজ বাসায় তাকে আহত করা হয়। এ ঘটনায় হাবিব (২৫) নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। হাবিবের বাবার নাম আবদুর রহিম। বাসা শাহজাহানপুর পানির ট্যাংক মহিলা কলেজের সামনে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর জয়া স্কুল থেকে তার বাসায় ফেরে। কিছুক্ষণ পর ওই বাসা থেকে শোরগোলের আওয়াজ শোনা যায়। প্রতিবেশীরা বাসায় প্রবেশ করে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত জয়াকে উদ্ধার করেন। পাশাপাশি হাবিবকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে বাসার নিচে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে। এজিবি কলোনির বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, জয়া বাসায় প্রবেশের পরপরই হাবিব বাসার কলিং বেল চাপ দেয়। ভাই এসেছে মনে করে সে দরজা খুলে দেয়। এরপরই হাবিব জোর করে ঘরে প্রবেশ করে উচ্চ শব্দে টেলিভিশন ছেড়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর জয়ার ওপর হামলা চালানো হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, বাসার ভেতর ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়েছে। সেখানে শুধু এক যুবক ছিল বলে মনে হয় না। যে যুবককে আটক করা হয়েছে, সেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে নাকি অন্য কেউ ঘটিয়ে ওই যুবককে ফাঁসিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি হাবিবকে বেঁধে রাখা হয়েছে। জয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। মেয়েটি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে এলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপরই প্রকৃত সত্য জানা যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে এসি আতিকুল ইসলাম বলেন, বাসার দেয়াল ও বাথরুমে রক্তের দাগ রয়েছে। বাসার পরিবেশ দেখে মনে হয়, দেয়ালের সঙ্গে বেশ কয়েকবার জয়াকে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। বাথরুমের বেসিনের ট্যাবে আঘাত লেগে জয়ার কপাল ফেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, যাকে আটক করা হয়েছে তাকে নেশাগ্রস্ত মনে হচ্ছে। এমনও হতে পারে, বাসায় চোর প্রবেশ করেছিল। চুরিতে বাধা দেয়ায় জয়াকে আহত করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলেও এসি জানান।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে- জয়াকে ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। জয়াকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে হাবিবকে থানায় আনা হয়েছে। হাবিব একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছে। জয়া এখনও কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। আগামীকাল তাদের উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তিনি আরও জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় জয়ার মা-বাবা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তাই তাদের কাছ থেকে এখনও তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, জয়ার জ্ঞান ফিরেছে। সে এখন বিপদমুক্ত। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, জয়ার শরীর থেকে ছুরির মতো কাচের টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে।