দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া রাজবাড়ী সদর উপজেলার উদয়পুর বালিকা আইডিয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুনকে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রক্ষার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়াদ থাকা কমিটিকে মেয়াদউত্তীর্ণ ঘোষণা এবং বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের প্রস্তাবিত অ্যাডহক কমিটিকে অনুমোদন দেয়ায় এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুনকে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গত ২১ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। এর আগে তাকে তিন দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু কোনো নোটিশের জবাব দেননি প্রধান শিক্ষক। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সোয়া দুই হাজার রশিদের মাধ্যমে ছয় বছরে আদায় করা টাকার হিসাব দিতে না পারা, হিসেব দেয়া ৭ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা না করা এবং নকল রশিদ ছাপিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ছয় বছরের হিসাব দিতে না পারা, নোটিশের জবাব না দেয়া এবং আদায় করা ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করে।
এদিকে, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ মেয়াদ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি শেষে হয়। এর তিন মাস আগে নতুন নির্বাচন পরিচালনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান কাছে চিঠি দেয় পরিচালনা পর্ষদ। ইউএনও গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানাকে (বর্তমানে ফরিদপুরের মধুখালিতে বদলি হওয়া) নিয়োগ দেন। কিন্তু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গত ৭ জানুয়ারি ইউএনওকে চিঠি দিয়ে জানান, গতবছরের ৬ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের স্বাক্ষর করা আদেশ অনুযায়ী যেখানে কমিটির মেয়াদ ছিলো ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, সেখানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার চিঠিতে তার ৪ মাস ৬ দিন আগেই কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখানো হয়।
এর ফলে বরখাস্ত হওয়া প্রধান বৈধ ও মেয়াদ থাকা কমিটি বাতিল করে নতুন অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ পান। তার সেই প্রস্তাব অনুযায়ী বৈধ কমিটিকে বাদ দিয়ে অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। গত ৩০ মে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ইউএনওকে সভাপতি ও বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের মনোনীত অন্য দুজনকে অ্যাডহক কমিটির সদস্য করা হয়।
এদিকে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক ওলিউল্লাহ শেখকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি খসড়া ভোটার তালিকা এবং চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেন কমিটির অনুমোদনে।
অন্যদিকে মেয়াদ থাকা কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে চিঠি দেয়ার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল হোসেন গাজী। সেই মামলা এখনো চলমান।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল হোসেন গাজী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, তথ্য প্রমাণসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছিলো। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানা এই অনিয়মে শুরু করেছিলেন। তিনি মেয়াদ থাকা কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আন্য কর্মকর্তারাও একই কাজ করেছেন। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান তাও পাত্তা দিলেন না শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, অভিযোগের চিঠি এবং নথিগুলো ডাকযোগে পাঠিয়েছেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। সরাসরি এসে দেননি। তিনি বলেন, যদি চিঠিগুলো পাওয়া যায়, সেখানে মোবাইল নম্বর দেয়া প্রয়োজন ছিলো। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইউএনওকে যে চিঠি দিয়েছেন, সে বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।