এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার এবং জিপিএ-৫ এ এগিয়ে মেয়েরা। জেলা ভিত্তিক পাসের হারে এগিয়ে পিরোজপুর এবং পিছিয়ে ঝালকাঠী জেলা। সোমবার (৬ মে) দুপুরে ফলাফলের পরিসংখ্যান ঘোষণা করেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম।
তিনি জানান, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫২ হাজার ৫৯৯ জন এবং ছাত্রী ৫৪ হাজার ২২ জন। পাস করেছে ৮২ হাজার ৫৩৫ জন। পাসে ছাত্রের সংখ্যা ৩৯ হাজার ১৩৮ জন আর ছাত্রী ৪৩ হাজার ৫৩৫ জন। মোট পাসের হার ৭৭ দশমিক ৪১ ভাগ। বরিশাল বিভাগে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে পিরোজপুর জেলা।
প্রতিবারের মতো এবারও এ শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাস ও জিপিএর হারে এগিয়ে রয়েছে। গত বছর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এ বছর পাসের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩০ ভাগ। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ধারাবাহিকভাবে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। গত কয়েক বছরে পাশের হার এবং জিপিএ-৫ এ ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের এ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মেয়েদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর ছেলেরা পাস করেছে ৭৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। সার্বিকভাবে পাসের হারে ৫ দশমিক ৯২ ভাগ পিছিয়ে পড়েছে ছেলেরা। অন্যদিকে, মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২১৭টি। ছেলেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৭২টি। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ২৪৫টি জিপিএ-৫ বেশি পেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২৮ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৫ হাজার ৯৬৫ জন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ২০১ জন মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১২ হাজার ২৩১ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ১ হাজার ৮৫৪ জন। অন্যদিকে, এই বিভাগে ১৫ হাজার ২৬১ জন ছেলে অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৩ হাজার ৭৩৪ জন। পাসের হর ৮৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮৯৮টি। পাসের হারে মেয়েদের থেকে ছেলেরা পিছিয়ে আছে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই বিভাগে ছেলেরা ৪৪টি জিপিএ-৫ বেশি পেয়ে মেয়েদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। তবে এই বিভাগে ছেলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় ২ হাজার ৬০ জন বেশি।
মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬৯ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়েরা ৭৩ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ছেলেরা ৬২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে ৫৩ হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৬ হাজার ৮১৬ জন। ৩১ হাজার ২২২ জন মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করেছে ২৩ হাজার ৪৫ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে, ২২ হাজার ৪৯ জন ছেলে অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৩ হাজার ৭৭১ জন। পাসের হার ৬২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ছেলেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮টি এবং মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২৯টি। মানবিকে পাসের হারে ছেলেরা পিছিয়ে আছে ১১ দশমিক শূন্য ৩৫ ভাগ এবং জিপিএ-৫ এ পিছিয়ে আছে ২০১টি।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২৪ হাজার ৮৮৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৯ হাজার ৭৫৪ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়েরা পাস করেছে ৮৪ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ছেলেরা ৭৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে ৯ হাজার ৫৯৯ জন মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ হাজার ১২১ জন। অন্যদিকে, ১৫ হাজার ২৮৯ জন ছেলে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১১ হাজার ৬৩৩ জন। ছেলেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬টি এবং মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৪টি। পাসের হারে ছেলেরা এই বিভাগে পিছিয়ে আছে ৮ দশমিক শূন্য ৫১ শতাংশ।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আনোয়ারুল আজিম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, গণিতে ফল কিছুটা বিপর্যয় হলেও ধারাবাহিকভাবে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের একাগ্রতা বেশি। পড়াশুনায় তারা আন্তরিক। এর সঙ্গে মেয়েদের অভিভাবকরাও দিন দিন সচেতন হচ্ছেন। তাই মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে পিরোজপুর জেলা। জেলায় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৫ ভাগ। পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ঝালকাঠি, ভোলা জেলা। পাসের হার ৬৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
পিরোজপুর জেলার ২৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর ১৩ হাজার ৬৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাস করেছে ১১ হাজার ৩৫৯ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরগুনা জেলা। জেলার ১৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১ হাজার ১২৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাস করেছে ৮ হাজার ৯৯৪ জন। পাসের হার ৮০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বরিশাল জেলার ৪১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৫ হাজার ৯১৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করেছে ২৮ হাজার ৫০৭ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভোলা জেলা। জেলার ১৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাস করেছে ১১ হাজার ৭৮২ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা পটুয়াখালী জেলার ২৫৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার ৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাস করেছে ১৪ হাজার ৬৫৮ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
পিছিয়ে থাকা ঝালকাঠী জেলার ১৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার ৭৭৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাস করেছে ৭ হাজার ২৩৫ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টি। অন্যদিকে, দুটি বিদ্যালয়ের একজন পরীক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। সোমবার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ওই তথ্য জানান বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম।
বরিশাল বোর্ডের আওতাধীন ১ হাজার ৪২৭টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। যার মধ্যে পিরোজপুর জেলায় সর্বোচ্চ ১৮টি, বরিশাল জেলায় ১৬টি, ভোলায় ৭টি, বরগুনা জেলায় ৫টি এবং পটুয়াখালী জেলায় ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। তবে ঝালকাঠি জেলায় কোনো বিদ্যালয়ই শতভাগ পাসের কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেনি।
এদিকে, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের আওতায় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এর মধ্যে ভোলা জেলার চরফ্যাশনের শশীভূষণ গার্লস হাইস্কুল থেকে ৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালি উপজেলার চরগঙ্গা আদর্শ সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ৩৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।