বাংলার নক্ষত্র : আনিসুজ্জামান স্যার - দৈনিকশিক্ষা

বাংলার নক্ষত্র : আনিসুজ্জামান স্যার

মুহম্মদ সজীব প্রধান |

সব নক্ষত্র মহাকাশে থাকে না, কিছু কিছু নক্ষত্র মানুষরূপে মানব সমাজেও বিচরণ করে। তাঁরা চিরকাল সমাজ, দেশ এবং জাতিকে আলোকিত করতে কাজ করে। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যার এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। এছাড়াও তিনি দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক ছিলেণ। বস্তুত তিনি ছিলেন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল অর্থাৎ তিনি জাতির নৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

আনিসুজ্জামান স্যার পাকিস্তান আমলে বাংলার উজ্জ্বলতম দিকপাল হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা জ্বলন্ত শিখা। ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত সর্বত্র তাঁর  বিচরণ স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছেন।

আনিসুজ্জামান স্যার ছিলেন সাম্প্রদায়িক চিন্তার বিরুদ্ধে। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্ব স্তরের মানুষের জন্য কাজ করেছে নিরন্তর। ধনী-দরিদ্র, শাষক ও শোষিতের বৈষম্যে তিনি ছিলেন সোচ্চার। এছাড়াও তিনি ছিলেন তরুণ প্রেমী তিনি তরুণদের আশা আকাঙ্ক্ষা বুঝতেন এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে নিবেদিত প্রাণের অধিকারী ছিলেন।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে তিনি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সত্যি বলতে বাংলা সংস্কৃতিতে তিনি নতুন দিগন্ত উন্মোচন  করেছেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রসঙ্গীত পাকিস্তানের জাতীয় ভাবাদর্শের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচার বন্ধ করতে বলা হলে তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ছিলেন মধ্যবিত্ত বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্ণধার।
 
শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণা ক্ষেত্রেও তাঁর বিচরণ চির অম্লান। তিনি অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও তাঁর নেশা ছিল লেখালেখি। তাঁর প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, আমার একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, পূর্বগামী, কাল নিরবধি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ এবং নানা বিষয়ে বই সম্পাদনা করেছেন তিনি।

শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আনিসুজ্জামান স্যার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ভারত রাষ্ট্রের সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট লাভ করেন।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যার ৮০ বছর অতিক্রম করার পর তিনি একটি পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘অনেক দিন বাঁচলাম। এখন  বাড়তি সময় জীবনযাপন করছি। এই বাড়তি সময় যেন অর্থপূর্ণ  হয়।’ হ্যাঁ, তিনি তাঁর পুরো জীবন কর্মের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ করেছিলেন যা বাংলার কোটি মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সত্যি বলতে তিনি চিরকাল বাংলার আকাশে নক্ষত্র হয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আলো বিলাবেন।

লেখক : মুহম্মদ সজীব প্রধান, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066540241241455