বাকৃবির হলে হলে গেস্টরুম, নবীনদের নির্যাতন - দৈনিকশিক্ষা

বাকৃবির হলে হলে গেস্টরুম, নবীনদের নির্যাতন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আবাসিক হলে থাকতে হলে লীগ করতে হবে—হয় ছাত্রলীগ না হয় তাবলিগ। যেতে হবে ছাত্রলীগের মিছিলে। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে শিখতে হবে ‘নৈতিকতা’। কীভাবে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা যায়, শিক্ষকদের সঙ্গে কিভাবে অসদাচরণ করতে হয়, কিভাবে ক্লাস ও শিক্ষকদের ফাঁকি দিতে হয়—এসবই শেখানো হয় কথিত নৈতিকতার নামে। এর জন্য প্রতিরাতে ডাক পড়ে গেস্টরুমে। করতে হয় জবাবদিহি। অন্যথা হলে নেমে আসে নির্যাতন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির এমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১২ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিয়ামুল কবির সজল ও আবুল বাশার মিরাজ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ৯টি আবাসিক হলে নবীন শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব হলের অতিথি কক্ষ বা গেস্টরুমই এখন নির্যাতন কক্ষে পরিণত হয়েছে। নির্যাতন ও বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের মিছিল-মহড়ায় শামিল হওয়ার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাস ছেড়ে বাইরে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন এসব শিক্ষার্থী।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের নিয়ম-কানুন জানানোর জন্য বছরজুড়েই তাঁরা নবাগত শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষা’ দিয়ে থাকেন। তাঁরাও তাঁদের জ্যেষ্ঠদের কাছে এমন ‘শিক্ষা’ পেয়েছেন। নিজেরা জ্যেষ্ঠতা পাওয়ার পর এখন তাঁরাও এ কাজটি করে যাচ্ছেন।

গত রবিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর সেখানেও ছাত্রলীগের নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে। এ ঘটনার পর অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে তল্লাশি চালানো হবে।

জানা গেছে, ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ৯টি আবাসিক হলেই রয়েছে গেস্টরুম। মূলত হলের নিচের তলায় এগুলো তৈরি করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের আত্মীয়স্বজন ও দর্শনার্থীদের জন্য। কিন্তু প্রতিরাতে হলে থাকা প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হয়। প্রত্যেককেই সারা দিনের কাজের জবাবদিহি করতে হয়। দিনের বেলায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মিছিলে না গেলে, নেতাদের সালাম না দিলে ও তাঁদের আদেশের বিঘ্ন ঘটলেই শিক্ষার্থীদের ওপর চলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। এ ছাড়াও ছাত্রদল-শিবির সন্দেহে প্রায়ই মারধর করার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। র‌্যাগিংয়ের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।

বর্তমানে প্রথমবর্ষের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা বাধ্যতামূলক। ভিন্নমত জানালে বা ফেসবুকে লিখলে ‘শিবির’ বলে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। তবে তাবলিগ করলে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সে কারণে প্রথমবর্ষের অনেক শিক্ষার্থী ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাবলিগ জামাতে ভিড়ছেন।

বিএনপি সরকারের সময় ছাত্রদলও একই কাজ করত বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুল হক হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলে নির্যাতন হয় বেশি। এর মধ্যে শামসুল হক হলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সবুজ কাজী। সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল থাকেন সোহরাওয়ার্দী হলে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট হল ছাত্রলীগের সভাপতিকে সালাম না দেয়ার অভিযোগে প্রথমবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করেছেন জামাল হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত ১টা থেকে শুরু করে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কক্ষে আটকে রেখে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করা হয় ওই শিক্ষার্থীকে। নির্যাতনের এমন আরো অনেক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে তদন্ত কমিটি করলেও জড়িত কারো বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গভীর রাত পর্যন্ত বড় ভাইরা আমাদের আটকে রাখে, অনেক অশালীন কথাবার্তা বলে এবং আমাদেরও এসব শিখতে হুকুম করে। গভীর রাত পর্যন্ত গেস্টরুমে থাকার কারণে আমরা সকাল বেলা ক্লাসে যেতে পারি না। আমরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে এসেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ কাজী বলেন, ‘এখন নির্যাতনের ঘটনা নেই বললেই চলে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিয়েছি, গেস্টরুমের ভালো দিকগুলো বাস্তবায়ন করতে যাতে হলের সিনিয়র-জুনিয়র সবাই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শংকর কুমার দাশ বলেন, ‘প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের চাপে না থাকে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে এই লক্ষ্যে সব প্রভোস্ট কাজ শুরু করে দিয়েছেন। হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।’

ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, ‘গেস্টরুমগুলোতে নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। হল প্রভোস্ট ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমলে নিয়েই গেস্টরুম কালচার বন্ধ করতে আমরা কাজ করব।’

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশরাফুল হক হলে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা সায়াদ ইবনে মমতাজকে সংগঠনের নেতারা কার্পেট দিয়ে মুড়িয়ে লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ওই একই হলে নবীন শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে আটকে রাখার বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ঘটনায় নিহত হয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি।

সায়াদের ভাই সালমান ইবনে মমতাজ বলছিলেন, ‘কে করবে কার বিচার! আমরা আল্লাহর কাছে আমার ভাইয়ের বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছি।’

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056710243225098