বাধাহীন দুরন্ত শৈশব - দৈনিকশিক্ষা

বাধাহীন দুরন্ত শৈশব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমার মনে পড়ে যায়, শৈশবের সেই সোনালি দিনগুলোর কথা। আমি আমার শিক্ষাজীবনে কলেজ পর্যন্ত গ্রামে থেকে পড়াশোনা করে এসেছি। ফলে শহরের তালাবদ্ধ স্কুলের সঙ্গে আমার পরিচয় সামান্য। সেখানে শিশুদের মানসিক অবস্থাটা কেমন হয় সেটা বুঝে ওঠার সাধ্যও আমার নেই। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন আরাফাত শাহীন।

তবে আমার মনে হয়, শহরে বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা করা এসব শিশু এমন অনেককিছু থেকেই বঞ্চিত যার স্বাদ আমরা পেয়ে এসেছি। আমার গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে বিশাল একটা খাল বয়ে গেছে। ছোটোখাটো একটা নদীর মতো দেখতে সেই খালের পাড়ে, আমার স্কুলের সীমানার মধ্যেই বিশাল আকারের একটা বটগাছ ছিল।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, টিফিনের ঘণ্টা বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ছুটে যেতাম বটগাছের নিচে। গাছের কাণ্ড থেকে নেমে আসা ঝুল ধরে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত ঝুলাঝুলি করে তারপর ক্ষান্ত হতাম। সেই বটগাছটি কেটে ফেলা হয়েছে বহু আগেই। স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে এখনো বটগাছটার শূন্যতায় মনটা হুহু করে কেঁদে ওঠে।

স্কুল প্রাঙ্গণে ছোটোখাটো হলেও একটা মাঠ ছিল। আমরা মাঠে ছুটে বেড়াতাম। এমন কোনো খেলা নেই যা আমরা খেলিনি। আমি স্কুল শুরু হওয়ার অনেক আগেই চলে যেতাম। আমার অনেক বন্ধুও চলে আসত। সবাই মিলে খেলাধুলা করতাম, যতক্ষণ না কোনো শিক্ষক এসে উপস্থিত হতেন। এমন দৃশ্য এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না স্কুলগুলোতে গিয়ে। শিশুরা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে।

আকাশ সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ আমাদের মানবিক সত্তাকে ধ্বংস করে দিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরোপুরি। আজকে আমাদের শিশুরা সহজেই বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। সমাজের মূলধারার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারছে না অনেকেই। মোবাইল গেমস আর টিভি কার্টুন আমাদের শিশুদের গ্রাস করে নিয়েছে পুরোপুরি। অবশ্য এতে যতটা না দায় আমাদের শিশুদের, তারচেয়ে বেশি দায় আমাদের অভিভাবকদের।

আমাদের সব সময় মনোযোগ থাকে কীভাবে শিশুকে ভালো রেজাল্ট করানো যায়। এজন্য তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পড়া গলাধঃকরণ করানো হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্কুলে কাটিয়ে দেওয়ার পর একটা শিশুকে আবার পাঠানো হয় কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার আগে যে তার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার প্রয়োজন এটা কখনো ভেবে দেখি না আমরা।

সারাদিন পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া একটা শিশু কীভাবে খেলাধুলা করতে যাবে? তাছাড়া অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে ঘরে আটকে রাখে। বাইরে গেলে নাকি সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে! এভাবে দিনের পর দিন একটা শিশুকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে রাখতে তার ভেতরটা আমরা ধ্বংস করে ফেলি। তার আত্মাকে মেরে ফেলা হয় পুরোপুরি। ফলে মানবিক কোনো ব্যাপার আর তাকে স্পর্শ করতে পারে না এতটুকুও।

আমরা আমাদের শৈশব কাটিয়ে দিয়েছি দুরন্ত ও বাধাহীন অবস্থায়। আমরা স্কুলে গিয়ে ক্লাস করেছি। শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে সেটা নিজেদের জীবন ও কর্মে বাস্তবায়ন করেছি। স্কুল ছুটি হলে এক দৌড়ে বাড়িতে চলে এসেছি। কোনোমতে খেয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছি পুকুর কিংবা খালের পানিতে। লাঠি হাতে মা এসে তাড়িয়ে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ডুবসাঁতার কেটেছি মনের আনন্দে।

বিকালে সোজা চলে গিয়েছি খেলার মাঠে। আবার সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে এসে বই নিয়ে বসেছি। আমাদের জীবনও একটা রুটিন মেনে চলত। তবে সে রুটিন ছিল আমাদের একান্তই নিজস্ব। সেখানে প্রবেশের অধিকার ছিল না কারো। এমন দুরন্ত শৈশব কাটিয়েই আমরা মানুষ হয়েছি। আমাদের মানবিক সত্তা নষ্ট হয়ে যায়নি এতটুকুও।

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আমার খুব আফসোস হয়; কিন্তু আমার সেই আফসোসকে ছাপিয়ে যায়, যখন দেখতে পাই, আমরা যা পেয়েছি তার কিছুই আজকের শিশুরা পাচ্ছে না। একটি মেরুদণ্ডহীন জাতি হিসেবে বেড়ে উঠছে আমাদের আগামী প্রজন্ম। আমি এই প্রজন্মের ভবিষ্যত্ নিয়ে বড়োই শঙ্কায় আছি।

 লেখক :আরাফাত শাহীনশিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059728622436523