‘উই উইল গিভ আওয়ার বেস্ট শট’—আফগানিস্তান ম্যাচের পর সাকিব আল হাসানের এই ঘোষণা ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগাম উত্তাপ ছড়িয়েছে। কার্ডিফে একই দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে প্রতিপক্ষের বোলিং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশী যে রণকৌশল নির্ধারণ করে ফেলেছেন, সেটিও ঘটা করে জানিয়ে দেওয়াটা লড়াইয়ের বারুদ মজুদ করেছে আরও। সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনারের কথায় কথায় সমানে-সমান লড়াইয়েরই প্রস্তুতি, ‘আমরা জানি ওদের (ভারতের ব্যাটসম্যানদের) কোথায় বল করতে হবে।’
যদিও তাঁর কথার পিঠে এমন প্রশ্ন ওঠাও ৃঅবান্তর নয় যে এই বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে খেলে ফেলা ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের বোলাররা কোথায় বল করেছেন? একেকটি ম্যাচ গিয়েছে এবং বোলারদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের বোলিং সামর্থ্য নিয়ে সংশয় রেখেই দিয়েছে। বোলারদের সক্ষমতার অভাব থাকায় ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের সামনে তাদের অসহায়ত্বই যে শুধু ফুটে উঠবে না, এ কথাও জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে এই পূর্বানুমানকে ভুল প্রমাণের সুযোগও কম।
বরং পরিসংখ্যানে বোলিংয়ের অন্ধকার দিকই ফুটে উঠছে বেশি। সেগুলোই আগে একটু তুলে ধরা যাক। শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত খেলতে হয়েছে ছয়টি ম্যাচ। যে ম্যাচগুলোতে টাইগারদের বিপক্ষে হয়েছে ১,৮৪৫ রান। যা এই বিশ্বকাপে কোনো দলের বোলারদের সর্বোচ্চ খরচ। সেখানেই শেষ নয়, এর চারটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের ইনিংস পেরিয়েছে তিনশর সীমা। এটিও এই আসরে অংশ নেয়া কোনো দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। এ বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া করেছে ৫ উইকেটে ৩৮১ রান।
ছয় ম্যাচের মধ্যে একটিতেই কেবল প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৬২ রানের জয়ে আফগানিস্তানকে গুটিয়ে দেয়া দলটির আরও বড় সংকটের জায়গা প্রথম পাওয়ার প্লে। এই বিশ্বকাপে প্রথম পাওয়ার প্লের মধ্যে মাত্র তিনবার দলকে ব্রেক থ্রু এনে দিতে পেরেছেন বোলাররা। শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডের বোলাররা যেখানে শুরুতেই ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন পাঁচবার। কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের সমকক্ষ হয়েছে নিউজিল্যান্ডও। অস্ট্রেলিয়ান বোলাদের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ব্রেক থ্রু এনে দেয়া ম্যাচের সংখ্যাও চার। অথচ বড় ম্যাচে বড় দলকে হারানোর ক্ষেত্রে বহুদিন থেকেই বাংলাদেশের কাছে পূর্বশর্ত এটি যে, ‘শুরুতেই কয়েকটি উইকেট তুলে নাও আর প্রতিপক্ষকে চেপে ধরো।’
সেই সন্দেহ আর সংশয় উবে যেতে ভারতের বিপক্ষে যা চাই, সেটি তো আফগানিস্তান ম্যাচের পর সাকিব বলেও দিয়েছেন, ‘আপনি যদি ম্যাচে (বোলিংয়ে) ভালো শুরু করতে না পারেন, তাহলে কাজটি অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমরা যদি প্রথম ১০ ওভারেই দুটো উইকেট তুলে নিতে পারি, তাহলে দারুণ কিছু ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যদি তিনটি নিয়ে নিতে পারি, তাহলে তো এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না। তবে আমাদের টার্গেট রাখতে হবে যেন অন্তত দুটো উইকেট প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই নিতে পারি। তা না হলে আক্রমণে এসে স্পিনারদের পক্ষে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা কঠিন হয়ে যায়।’
কীভাবে কঠিন হয়ে যায়, সেটিও ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়েছেন সাকিব, ‘উইকেট ফেলতে না পারলে দুই ব্যাটসম্যান উইকেটে সেট হয়ে যায়। তখন তারা সহজেই খেলতে পারে। আর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট ফেলতে পারলে সহজ হয় স্পিনারদের কাজ। তখন তারা নতুন ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলতে সক্ষম হয়।’ সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে হলেও নতুন বলের বোলারদের সফল হওয়া চাই। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি ৪৪ ওভারে ২৭৯ রান খরচায় নিয়েছেন মোটে ১ উইকেট। যথাক্রমে ছয়টি ও পাঁচটি করে ম্যাচ খেলে মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের সমানসংখ্যক ১০ শিকারে তাঁদের সফল মনে হতে পারে। কিন্তু তাঁরাও তো ওভার প্রতি সাড়ে ছয় করে রান দিয়ে আসছেন!