বাড়িতে বই খুলে পরীক্ষায় বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা! - দৈনিকশিক্ষা

বাড়িতে বই খুলে পরীক্ষায় বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা আবহে সংক্রমণ রুখতে বাড়িতে বসেই পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়ারা। বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি গ্রহণ করা হলেও তার জন্য কতটা প্রস্তুত রয়েছেন পরীক্ষার্থীরা,এই প্রশ্ন উঠছে।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘ওপেন বুক এক্সাম’ বা বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত৷ ভারতেও কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু মোটের উপর এদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অতীতের পদ্ধতিই চলে৷ অর্থাৎ পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশ্নের উত্তর দেন।

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় একই ছবি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়া কষ্টসাধ্য হওয়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল ব্যবস্থায়।

পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশ নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর রাজ্য সরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বলেছে,অক্টোবরে পরীক্ষা নিয়ে সেই মাসেই ফল প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় বসিয়ে,তাদের উত্তরপত্রের বহির্মূল্যায়ন করে এক মাসের মধ্যে ফল বার করা সম্ভব নয়। তাই অনলাইন বা অফলাইন পরীক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেছে, তারা পরীক্ষা নেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্নাতক স্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন তৈরি করে পাঠাবে কলেজকে। সেই প্রশ্ন কলেজ দেবে পড়ুয়াদের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরপত্র তৈরি করে অনলাইনে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে কেউ অফলাইনে বা কলেজে এসে উত্তরপত্র জমা দিতে পারেন।

উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিয়মে বদল আসছে৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, কোনো কলেজ সেখানে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের খাতা দেখবে৷ স্নাতকোত্তর স্তরের ক্ষেত্রেও পরীক্ষা গ্রহণে যেমন একই পদ্ধতি নেওয়া হবে, তেমনই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় শিক্ষকরা। অর্থাৎ ফলাফলের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের খাতা দেখা বা বহির্মূল্যায়নের সুযোগ থাকছে না।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে আলোচনা চালাচ্ছে। সিদো কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক সুবল দে জানান, তারা এবার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দিতে বলবেন না। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক অনিন্দ্যজ্যোতি পাল জানিয়েছেন,তারা পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য আলোচনা করছেন।

বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিলে সব পরীক্ষার্থী বই দেখে উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাবে। এই ওপেন বুক এক্সাম-এ কি পরীক্ষার্থীর সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব? অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু বলেন, ‘‘আমরা যখন উন্নত দেশের শিক্ষাদানের পদ্ধতি অনুসরণ করছি, তখন পরীক্ষা পদ্ধতি কেন নেব না। যিনি প্রশ্ন তৈরি করবেন, তাকে মাথায় রাখতে হবে, মুখস্থ বিদ্যা বা রেডিমেড নোট কাজে লাগিয়ে যেন উত্তর দেওয়া না যায়। যে পড়ুয়া বিষয়ের গভীরে পড়াশোনা করেছেন, এই পদ্ধতিতে তার সঠিক মূল্যায়ন হবে। তাছাড়া সংক্রমণের সময় পরীক্ষাকেন্দ্রে ছেলেমেয়েদের টেনে আনা নিরাপদ নয়।’’

একই মত আশুতোষ কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সম্রাট গোস্বামীর। তিনি বলেন, ‘‘চিরাচরিত ধাঁচে সাধারণ প্রশ্ন হলে মূল্যায়ন ঠিক হবে না। এমন প্রশ্ন করা দরকার যার উত্তর হবে ক্রিটিক্যাল অর্থাৎ বিষয় না বুঝে লেখা যাবে না।’’

কিন্তু যে দেশে শিক্ষা মূলত কোচিং সেন্টার, সাজেশন ও নোটবুক-নির্ভর সেখানে হঠাৎ ওপেন বুক এক্সাম কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ পাঠক এই পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেন।

তবে তিনি বলেন, ‘‘ওপেন বুক এক্সাম-এর জন্য ছাত্রকে প্রস্তুত করতে হলে শিক্ষককে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমাদের শিক্ষকদের সেই প্রশিক্ষণ নেই, আমরা শর্টকাট নিই। তাই পড়াশোনা এখন গাইডবুকের উপর নির্ভরশীল। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের দশটি কারণ মুখস্থ করে যায়, এ নিয়ে পর্যালোচনার ক্ষমতা তাদের গড়ে ওঠে না। ব্ল্যাক মানির মতো এটা ব্ল্যাক এডুকেশন। এতে শিক্ষারই অপমান।’’

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012490034103394