আমরা জানি, পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকতে হয়। এমনকী এও জানি আমাদের দেশে বনের পরিমাণ ১৫ ভাগেরও কম। আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা গাছই আমাদের দিয়ে থাকে। বিনিময়ে আমাদের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত হওয়া ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে নেয় গাছ। এতে বায়ুমণ্ডলে উপাদান দুটির ভারসাম্য রক্ষা পায়। শহরায়নের ফলে একদিকে বাড়ছে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড অন্যদিকে কমে আসছে বনভূমি। তাই বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আধিক্যের কারণে বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওজন স্তর। তাই আমরাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি দিন দিন। পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই।
একটি বিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী থাকে এবং তারা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করে। এই সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ হয় অধিক পরিমাণে। তাই বৃক্ষরোপণের আদর্শ স্থান হতে পারে বিদ্যালয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ফুটবল খেলার একটি মাঠ থাকে যার দৈর্ঘ্য অন্তত ১২০ ফিটের বেশি এবং প্রস্থ ৮০ ফিটের অধিক। অবকাঠামোর পাশেও বেশ জায়গা খালি পড়ে থাকে। পরিকল্পিতভাবে ভবন ও মাঠের চারপাশে ফলদ ও ওষুধি গাছ রোপণ করা হলে সৌন্দর্য বাড়বে বিদ্যালয়ের, সেইসঙ্গে তা হবে অর্থকরী এবং অধিক নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণে ভূমিকা রাখবে। কৃষি ও জীব বিজ্ঞানের ব্যবহারিক ক্লাস হবে আরো সমৃদ্ধ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে বৃক্ষপ্রেম। স্কুলের আঙিনা থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়ি হবে সবুজের মেলবন্ধন। এতে করে যেমন কমে আসবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তেমনি বাড়বে অক্সিজেনের সরবরাহ।
এ বছর তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে যা আমাদের দেশের জন্য অসহনীয়, ফলে তাপদাহে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সামনের দিনগুলোতে এর মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে আর তাই এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে সুন্দর সহনীয় আগামীর জন্য। আর সারা দেশের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসতে হবে সবুজায়নের আওতায়। শুধু গ্রিন ফ্যাক্টরি স্থাপন নয় বিদ্যালয়গুলোকেও গ্রিন করতে এখনি উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে বৃক্ষরোপণের সঙ্গে। তাদের শেখাতে হবে অযথা গাছ কাটা যাবে না। প্রতিটি অবকাঠামো নির্মাণের সময় খেয়াল করতে হবে যেন গাছ লাগানোর জায়গা থাকে। পরিশেষে, প্রত্যাশা করি—সমন্বিত উদ্যোগে আমাদের দেশের প্রতিটি বিদ্যালয় হবে সবুজ অরণ্য। সচল হবে অক্সিজেন ফ্যাক্টরি যা দেবে আমাদের সতেজ নিশ্বাসের নিশ্চয়তা।
গাজীপুর