বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের ১০০টির মতো দেশে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবস পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে।
শিক্ষক প্রদীপের মত নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন। অর্থাৎ শিক্ষক অমর, তিনি বেঁচে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীর আদর্শের মাধ্যমে। প্রত্যেক শিক্ষকের উদ্দেশ্য থাকা উচিৎ আদর্শ শিক্ষা।
" একটি আলোর কণা পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে,
একটি মানুষ, মানুষ হলে বিশ্বজগৎ টলে।"
সোনার বাংলা গড়ার কারিগর, জাতির সঠিক পথ নির্দেশক এবং দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কর্ণধার, ধারক ও বাহক হলেন শিক্ষক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যত পেশা আছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মহৎ পেশা হল শিক্ষকতা। তাই এই পেশাই ছিল আমার স্বপ্ন, আমার চাওয়া -পাওয়া।এই মহৎ ও পবিত্র পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্য দিয়েই আমার আগমন ঘটে শিক্ষকতা পেশায়। দেশ ও জাতিকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সেবা দেবার একমাত্র পথ ও পেশা হল শিক্ষকতা। তাই এই পেশায় পেশাজীবী হতে পেরে আমি গর্বিত। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, সমাজ, সংসার ও দেশের সর্বস্তরের লোক শিক্ষকদের সম্মান করেন।
একজন আদর্শ শিক্ষক সবার শ্রদ্ধা, ভালবাসার পাত্র হিসাবে গৃহীত হন সর্বত্র। তাই এই পেশাকে আমি আমার জীবনের একমাত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছি। আমি যতদিনই বাঁচবো, ততদিনই এই পেশায় সেবা দিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।
শিক্ষকতা পেশা মহান ব্রত। এ ব্রত পালনে শিক্ষককে হতে হয় নৈতিক আদর্শে উজ্জ্বল। "যিনি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জ্ঞান তৃষ্ণা জাগিয়ে, মনের সুকুমার বৃত্তিগুলোর পরিচর্যা করে শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষে পরিণত করেন তিনিই শিক্ষক।" আমাদের দেশে আদর্শ শিক্ষকের বড় অভাব। সততা, নৈতিকতা, উদারতা, আধুনিকতা, ব্যক্তিত্ব তথা সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষকই আদর্শ শিক্ষক।
কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাই শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। তিনি শিক্ষায় নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও আদর্শ মূল্যবোধ শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দিবেন। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। এটি অর্জনের অন্যতম কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ডের বিশ্লেষণ সত্যিই যথার্থ। তিনি বলেন- "একজন সাধারণ শিক্ষক বক্তৃতা করেন, একজন ভাল শিক্ষক বিশ্লেষণ করেন, একজন উত্তম শিক্ষক প্রদর্শন করেন, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন।"
শিক্ষকতা একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের পূর্বশর্ত, যা পালন করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। প্রতিষ্ঠান প্রধান শুধু প্রধান শিক্ষক / অধ্যক্ষই নন তিনি একজন শিক্ষকও। প্রধান শিক্ষক / অধ্যক্ষকে কেবল ছাত্রদেরই শেখাতে হয় না, তাঁকে শেখাতে হয় প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। দক্ষতার সাথে সমন্বয় ঘটাতে হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও একাডেমিক সুপারভিশনের। ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি করতে হয় আত্মিক মেলবন্ধন। তবে তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক।
প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করা। শিক্ষার্থীদের অন্ধকার হতে আলোর পথে নিয়ে যাওয়া এবং বাস্তব ও সত্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। শিক্ষকের আরেকটি পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। তাঁকে মনে রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন সর্বোচ্চ বিচারক। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যায়নে ব্যর্থ হলে বা ভুল করলে ধ্বংস হয়ে যাবে একটি প্রজন্ম, একটি জাতি তথা একটি দেশ। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে শিক্ষককে হতে হবে আরো বেশি সৎ ও আন্তরিক। তাঁকে মনে রাখতে হবে তাঁর সামান্য ভুলের কারণে একটি জাতি নিক্ষিপ্ত হতে পারে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। প্রত্যেক শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য এবং শিক্ষকতা পেশার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হিসেবে শিক্ষার্থীর হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া। তাহলেই আপনার (শিক্ষকের) স্থান হবে সমাজে, দেশে এবং ইতিহাসের সোনালি পাতায়।
লেখক : সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) ফকিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় পায়রাহাট, অভয়নগর, যশোর।