বিশ্ব শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য ও আমাদের প্রাপ্তি - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য ও আমাদের প্রাপ্তি

সিরাজুল ইসলাম |

আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রথম বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১ ‘ এর স্লোগান হচ্ছে The right to education means the right to a qualified teacher, অথাৎ শিক্ষার অধিকার মানে একজন যোগ্য শিক্ষকের অধিকার। বিশ্ব সম্প্রদায়কে এটাই মনে করিয়ে দেয়া যে, শিক্ষার অধিকার প্রশিক্ষিত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আজও যোগ্য শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

ইউনেস্কোর হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায় ২৬৪ মিলিয়ন শিশু ও যুবক স্কুলের বাইরে। ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সর্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পৌছে দেয়ার জন্য প্রায় ৬ কোটি নতুন শিক্ষক প্রয়োজন। শিক্ষকই সবার জন্য সমান ও মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের চাবিকাঠি। শিক্ষক হচ্ছে এমন একটা মাধ্যম, যার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং শিক্ষক ছাড়া একটি মৌলিক মানবাধিকার পূরণ করা যায় না। বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে এই দিবস পালিত হয়। এই দিবস পালনে Education International (ET) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা পালন করে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব শিক্ষক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হওয়ার কথা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, এই দিবসটি খুব একটা গুরুত্ব সহিত সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পালিত হয় না। অথচ এই শিক্ষকরাই আমাদের একটি মৌলিক অধিকার পূরণে সরাসরি ভূমিকা পালন করেন। আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, যারা শিক্ষকতার মত মহান পেশার সাথে জড়িত ছিলেন বা আছেন তাদের। আজ মনের গভীর থেকে বিশ্বের সকল শিক্ষককে জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক আপনাদের জীবন ও কর্ম, আলোকিত হোক গোটা জাতি।

বাংলাদেশের  শিক্ষকরাও নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও জ্ঞানে বিতরণের মহান কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে । কিন্তু যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবও রয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত এই সমস্যা বিদ্যমান। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে বেতন বৈষম্য। যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নির্ধারিত হওয়া উচিত, কিন্তু আমাদের দেশে শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী বেতন কাঠামো নির্ধারিত হয়, যা খুবই দূঃখজনক। যে কারণে মেধাবীরা শিক্ষকরা এই পেশায় আসতে অনীহা প্রকাশ করে। এছাড়া পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবেও শিক্ষকের দক্ষতা ও গুনগত মানের উন্নয়ন হচ্ছে না।

প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ বর্তমানে শিক্ষকদের উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। শুধু তাই নয় শিক্ষকদের সন্তোষজনক বেতনপ্রাপ্তিও পাঠদানে মনোযোগী হতে আগ্রহী করবে। আমাদের দেশে এখনো শিক্ষকদের এমপিওর জন্য রাস্তায় আন্দোলন করতে হয়, মার খেতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক। উচ্চ শিক্ষায় পাঠদানরত অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকরা এখনও ননএমপিও। অথচ এরাই উচ্চ শিক্ষাদানে ৭০ ভাগ অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু যাদের জীবন মানের কোন উন্নতি নেই, তারা কীভাবে কোয়ালিটি শিক্ষা দেবেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ৫/১০ হাজার টাকায় তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। শিক্ষকের জীবন মানের উন্নয়ন হোক, তৈরি হোক যোগ্য শিক্ষক, আলোকিত হোক সমাজের প্রতি মানুষ, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

 

লেখক : প্রভাষক, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ, শ্রীপুর, গাজীপুর।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040688514709473