বিষখালি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে বাদুরতলা স্কুল - দৈনিকশিক্ষা

বিষখালি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে বাদুরতলা স্কুল

ঝালকাঠি প্রতিনিধি |

ঝালকাঠির রাজাপুরের বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মঠবাড়ি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। বাদুরতলা বাজারে অবস্থিত হওয়ায় এই বিদ্যালয়টি বাদুরতলা স্কুল নামে পরিচিত। জোয়ারে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে স্কুলের পূর্ব পাশের কয়েকটি রুম ও বারান্দা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনো সময় পুরো বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশেই জামে মসজিদ রয়েছে। ইতোমধ্যে বাদুরতলা বাজারের অর্ধশত দোকান, বসতঘর ও গাছপালা কয়েকশ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটা মাটি হারিয়ে অনেকে পথে বসেছেন। বিদ্যালয়ের কক্ষ ভেঙে যাওয়া ওই ভবনটিতে করোনা সংক্রমণের আগ থেকেই ক্লাস বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। ফলে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিষখালী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। তীব্র ভাঙনে বাদুরতলা লঞ্চঘাট, বাদুরতলা বাজার, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশের সড়ক এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাদুরতলা জামে মসজিদ এবং বড়ইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এছাড়া বাদুরতলা-পুখরীজানা-মানকি সুন্দর সড়ক ও বাদুরতলা-চল্লিশ কাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মঠবাড়ি ও বড়ইয়া ইউনিয়নের হাজারো মানুষ পড়েছে বিপাকে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার খলিফা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের ২টি কক্ষ আসবাবপত্র, বেঞ্চ, টেবিল ও চেয়ারসহ মালপত্র রাতের আধারে বিষখালি নদীতে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করা না গেলে অচিরেই হয়তো পুরো বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। 

এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়ের একটি ভবনের অর্ধেকটা নদীতে ভেঙে যাওয়ায় আমাদের ক্লাস অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পুরো ভবনটি ভেঙে গেলে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। 

স্থানীয় অভিভাবক ফেরদৌস হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এই গ্রামে একটি মাত্র বিদ্যালয় যেখানে আমার সন্তানসহ কয়েকশ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়টি নদীতে ভেঙে গেলে দশ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরের স্কুলে অনেক ছাত্রছাত্রীরই লেখাপড়া করা সম্ভব হবে না। তাই বিদ্যালয়টি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইউব আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য একাধিকবার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনও উদ্যোগ না নেয়ায় বিদ্যালয়টি রক্ষা করা আর সম্ভব হলো না। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের একটি কক্ষ আসবাবপত্রসহ অর্থাৎ বেঞ্চ, টেবিল ও চেয়ারসহ সব মালপত্র নিয়ে রাতের আধারে বিষখালি নদীতে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ইউএনও আমাদের বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন এবং বিদ্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ব্লক বা বড় গাছের পাইলিং না দেয়া হলে পুরো বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাবে। বর্তমানে নিরুপায় হয়ে পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যালয়ের জন্য অন্য জায়গায় জমি কেনার চেষ্টা করছেন। 

মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়টি বাঁচাতে ও বিষখালীর ভাঙন বন্ধ করতে বহুবার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয়, এখনো কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিদ্যালয়টি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করছি। তবে অর্থাভাবে তা এখনো সম্ভব হয়নি। এ পর্যন্ত বিষখালির ভাঙনে অর্ধশত দোকান, বসতবাড়ি, বাজার ও গাছপালাসহ কয়েকশ’ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করা না গেলে পুরো বিদ্যালয় ও বাদুরতলা বাজার জামে মসজিদটিও আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এলাকার লোক এখন সবাই ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।

রাজাপুরের ইউএনও সোহাগ হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ভাঙন থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশলী পাঠিয়ে পরিদর্শন করানো হয়েছে এবং ম্যানেজিং কমিটিকে রেজুলেশন করে ভাঙনের মুখে ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ভাঙা বিদ্যালয়টির নিলাম এবং বিদ্যালয়ের জন্য নতুন জায়গা খুঁজছি, জায়গা পেলেই বিদ্যালয় স্থানান্তরের কাজ শুরু করব। 

রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ভাঙন রোধ ও বেড়িবাধ নির্মাণের জন্য কয়েক দফায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076189041137695