চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত আর মুষলধারে বৃষ্টিতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত আর ভীতিতে তটস্থ ঠিক ওই সময় গতকাল রবিবার ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছিল বাঁশখালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৪০ ফুট প্রস্থের এই ছাদ ঢালাইয়ে কাজে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির বাধা মানেননি ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
ফলে ছাদ ঢালাইয়ের পরবর্তীতে আজ সোমবার পুরো ছাদই ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কোথাও দেওয়া হয়নি ভাইব্রেটর দিয়ে ভাইব্রেশন। বাধাদানকারী স্কুলের অভিভাবকদের ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন এই বিল্ডিং দুইশত বছরে কোনো কিছু হবে না। অতএব আমরা যাই করি বাধা দেবেন না।
স্কুলের অভিভাবক ও গ্রামবাসীর অভিযোগ, ৬ মাস আগে ফ্যাসিলিটিজ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বজলুর রহমান জে কে ট্রের্ডাস জে বি ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার ৪ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। শুরুর এক মাসের মাথায় ভয়াবহ দুর্নীতি করায় গ্রাউন্ড ফ্লোরে ১২০ ফুট দেয়াল সম্পূর্ণ ধ্বসে পড়ে। ওই সময় শিক্ষক, অভিভাবক ও গ্রামাবাসী ফ্যাসিলিটিজ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এর পর থেকে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা একাট্টা হয়ে আরো লাগামহীন দুর্নীতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নিম্নমানের লোহার রড, সিমেন্ট, কংক্রিট, সিলেটি বালির পরিবর্তে স্থানীয় বালি ব্যবহার করছে। স্কুলের অভিভাবকদের অভিযোগ স্থানীয় এক ব্যক্তির দাপটে মহাদুর্নীতিতে এ কাজ চলছে।
স্কুলের অভিভাবক লিয়াকত আলী, আব্দুর রহিম, জসিম উদ্দিনসহ অনেকে বলেন, ৪ তলা স্কুল ভবনের কাজ মুষলধারে বৃষ্টিতে কখনও হতে পারে না। এখানে যারা দুর্নীতি করেছে প্রশাসনিকভাবে তাদের খুঁজে বের করা উচিত।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুমিত্র সেন বড়ুয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মুষলধারে বৃষ্টির কারণে আমি কাজে বাধা দিয়েছিলাম। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা তা মানেন নি। এ কারণে ছাদ ঢালাইয়ে ধ্বস নেমেছে।
স্কুল ম্যনেজিং কমিটির দাতা সদস্য ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রতিনিধি শেখ মোস্তফা আলী চৌধুরী মিশু বলেন, আমাদের পরিবার স্কুলে ৫ একর জায়গা দান করেছেন। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে মুষলধারে বৃষ্টিতে কাজে বাধা দিলেও তারা ২০০ বছরে বিল্ডিং কিছু হবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এই কাজটি করেছেন।
ফ্যাসিলিটিজ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাঁশখালীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আরমান হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সাথে আলাপ করে কাজটি করেছি। এখানে আমার একার কোনো সিদ্ধান্ত নাই।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বজলুর রহমান জে কে ট্রের্ডাস জেবির মালিক বজলুর রহমান বলেন, আমি তো ঠিকাদার। প্রকৌশলীরা যা বলেন তাই করি। আমার কোনো দোষ নেই। বরং দুই/তিন বার কাজ করতে আমার ক্ষতি হচ্ছে।
ফ্যাসিলিটিজ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল ভবনের কাজে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে না। মুষলধারে বৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তির ঘরের কাজ যদি হতে পারে। তাহলে সরকারি কাজে কেন বাধা থাকবে? এটা কোনো অনিয়ম না।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, আমি জেলার মিটিংএ আছি। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেখে জানানোর জন্য বলেছি। পরে বিষয়টি আমিও দেখব।