বেসরকারি শিক্ষকদের অশেষ কৃতজ্ঞতা - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের অশেষ কৃতজ্ঞতা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

এ লেখাটি যখন লিখতে বসেছি, তখন দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মনে এক অনাবিল আনন্দ ও অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা বিরাজমান। তাদের অতি ন্যায্য দু'টো দাবি 'বৈশাখী ভাতা' আর 'বার্ষিক প্রবৃদ্ধি' এখন আর অধরা নেই। এটা আদায়ের জন্য কত রকমভাবে কত আন্দোলন করতে হয়েছে। স্মারকলিপি দেয়া থেকে মানববন্ধন আর মহাসমাবেশ ও অনশন কিছুই বাদ যায়নি।

গত বছর এ সময়ে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকা শহরের রাজপথে খোলা আকাশের নীচে বহু বিনিদ্র রাত পার করেছেন। আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছাড়া কিছু নিয়ে ঘরে ফেরতে পারেননি। এসব প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস এ একটি বছর কেবলই কষ্টের কথামালা ছাড়া কিছু ছিল না। সবাই প্রায় নিরাশই হয়ে গিয়েছিলেন। তবু একেবারে হতাশ হয়ে পড়েননি। একজন মুজিবকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর কী যে এক অগাধ আস্থা আর বিশ্বাস সকলের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করছিল। সবার মাঝে এ বিশ্বাসটি খুব দৃঢ়ভাবে জন্মে উঠেছিল যে, একদিন না একদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা শিক্ষক-কর্মচারীদের দিকে চোখ তুলে ফিরে তাকাবেনই। তাদের সে বিশ্বাসটি অমুলক হয়নি। 'মানবতার জননী' খ্যাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাণের দাবি দু'টোর প্রতি সম্মান জানিয়ে সকলকে যে সারপ্রাইজটি দিয়েছেন, সেটি দেশের শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্য বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে মাইল ফলক হিসেবে যুগ যুগ ধরে চিহ্নিত থাকবে। 

গত দু'দিন আগে তিনি গণভবনে যে ঐতিহাসিক ঘোষণার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের হাতে বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট তুলে দিয়েছেন, সেটি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নিঃসন্দেহে এক অবিস্মরণীয় অর্জন ও অনিন্দ্য এক সুখের অনুভূতি। টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ সদিচ্ছাটি গোটা জাতির জন্য এক উপহারও বটে। বরাবরের মতোই শিক্ষকদের এই সুসংবাদটি দিয়েছে শিক্ষাবিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষা। এ খবরে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অতিশয় আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। নানাভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাদের অকৃত্রিম ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে উদগ্রীব। তাদের প্রাপ্তির অসামান্য আনন্দটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তারা উৎসর্গ করতে চান।

বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট আন্দোলনের এক অতি নগন্য ও নিভৃতচারী কর্মী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আকাশসমান কৃতজ্ঞতা জানাতে আমার তো দৈনিক শিক্ষার আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া কোন পথ নেই। সে পথেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ নিরাপদ জীবন কামনা করি। এ শুভক্ষণে দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য ও আমার অফুরান শুভেচ্ছা। দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে খাটো করার ইচ্ছে একেবারেই নেই। শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্য তিনি ও তাঁর অনলাইন পত্রিকাটি কী দুঃসাহসী ও আপোসহীন ভূমিকা সবসময় পালন করে থাকেন, সেটি অন্তত দেশের পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কারোরই অজানা নয়। বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে সিদ্দিক ভাই ও তার পত্রিকাটি অনুঘটকের ভূমিকাই পালন করেছেন। এ বিষয়টি কোনদিন ভুলে যাবার কিংবা ভুলে থাকার মত নয়।        

আজকের লেখাটি আর মাত্র দু'টো কথা বলেই শেষ করব। যে ইনক্রিমেন্টটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সযতনে শিক্ষক-কর্মচারীর হাতে তুলে দিয়েছেন, সেটি নিয়ে নানা জনে নানা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আমার মাঝে সে আশঙ্কাটিও কিছুটা কাজ করছে। আশঙ্কাটি একেবারে অমূলক নয়। এ প্রসঙ্গে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ দিয়ে বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বলি। প্রবাদটি এরকম 'ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদেরও হয়েছে তা-ই। এর আগে তাদের একটি অচল-অসার ইনক্রিমেন্ট ছিল। সেটির হাত পা ছিল না। নড়চড় করতে পারত না। বেতন স্কেল অনেক দূর চলে গেলেও সেটি এক জায়গায় পড়ে বসে থাকত। হাঁটাবসা করতে পারত না। এবার যে ইনক্রিমেন্টটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ভালবাসায় সিক্ত হয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের হাতে এসে পৌঁছেছে, সেটি যেন এরকম না হয়।

ইনক্রিমেন্টের শাব্দিক, পারিভাষিক ও প্রায়োগিক ব্যবহার দেখতে চাই। বছরে বছরে যেন এর যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন হয়। সেটি যেন সবসময় জীবন্ত ও প্রাণবন্ত থাকে। যারা কোনদিনই শিক্ষক-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্টের নামগন্ধ শুঁকতে দিতে চায়নি, এরা চাইবে সুকৌশলে সে মরা-পঙ্গু ও অচল-অসার ইনক্রিমেন্টটি পুনরুজ্জীবিত করে শিক্ষক-কর্মচারীর ঘাড়ে বসিয়ে দিতে। এরা বড় দুষ্ট ও দুরাচার প্রকৃতির মানুষ। অনুগ্রহ করে প্রজ্ঞাপনে যেন এ বিষয়ে কোন ফাকঁ-ফোকর না থাকে। ফাঁক-ফোকর পেলে এরা সুঁচের ছিদ্র দিয়ে গাছ ঢুকিয়ে দিতে পারে। এদের কারণেই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা গত তিন বছরে বৈশাখী ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট পেতে ঘাটে ঘাটে কত জল খেয়েছেন, সে কেবল তারাই জানেন ।                                  

আসল কথাটি আজ সবশেষে বলি। সেটি সরকারিকরণের কথা। বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন চূড়ান্ত দাবি ছিল না। 'সরকারিকরণ'ই চুড়ান্ত দাবি। বৈশাখী ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট সরকারিকরণের পথে দু'দু'টো গুরুত্বপুর্ণ সিঁড়ি, তাতে সন্দেহ নেই। এ দু'টো সিঁড়িতে যেন কোন ভেজাল মেশতে না পারে, সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। প্রাপ্তির অতিশয় আনন্দে শিক্ষক-কর্মচারীরাও যেন এ কথাটি বিস্মৃত না হন। 

 

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042350292205811