ব্যাংকে চাকরির আবেদনে প্রার্থীদের আবারও ফি দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদন ফি হবে দুইশ’ টাকা। তবে কী উপায়ে এ ফি প্রার্থীরা জমা দিবেন তা এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। সম্প্রতি দেশের সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে অনেক প্রার্থী আবেদন করে। তার মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক প্রার্থীই পরীক্ষা দিতে আসেন না। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করতে হয় সবার জন্যই। এতে অর্থের অপচয় হয়। যার ভার সরকার ও ব্যাংকগুলোকে বহন করতে হয়। ফলে অনেক ব্যাংক এই অর্থ দিতে অনিহা প্রকাশ করছে। ফলে ব্যাংকগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোনো ব্যাংক চাইলে আবেদন ফি না নিয়েও নিয়োগ পরীক্ষা নিতে পারবে এমন সুযোগ রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
এর আগে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে মানবিক কারণে ব্যাংকে চাকরি প্রার্থীদের আবেদনে ফি না নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে আবেদন ফি লাগলেও ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা লাগতো না। ড. আতিউর রহমান গভর্নর থাকাকালে ওই সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল, ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদনের সময় পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট আকারে ফি দেয়া তরুণ চাকরি প্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এর আগেও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এক সার্কুলারে ফি আদায় না করার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু কিছু ব্যাংক চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের কাছ থেকে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট আকারে ফি আদায় করছে। ফলে এখন এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ব্যাংকের চাকরিতে আবেদনের সময় আবেদনকারীর থেকে কোনো প্রকার ফি আদায় করা যাবে না।
তবে সম্প্রতি আবেদনকারীদের অনুপস্থিতির হার বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার ফি আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আবেদন ফি সংক্রান্ত বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ৩০০ টাকার বেশি ফি নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু গভর্নর তা কমিয়ে ২০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত দেন। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ফি সোনালী ব্যাংক কিংবা টেলিটকের মাধ্যমে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক একজন গভর্নর বলেন, এই সিদ্ধান্তটি মানবিক কারণে নেয়া হয়েছিল। সাধারণত একজন প্রার্থীকে চাকরি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আবেদন করতে হয়। এতে অল্প খরচই তার জন্য বোঝা হয়ে যায়। তার উপর পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা যাওয়া খরচও তাকে বহন করতে হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর জন্য এই অর্থ খুব বেশি নয়। তাছাড়া সরকারি অর্থ সাধারণ মানুষের কল্যাণে খরচ করার জন্যই। এটিও একটি কল্যাণমূলক খাত। বেকারত্ব দূর করতে এটুকু ছাড় সরকারের দেয়া উচিত। তবে অনুপস্থিতির হার কমাতে অন্য উপায় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি গঠনের পর তারাই সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে থাকে। বর্তমানে সিলেকশন কমিটি কয়েকটি সরকারি ব্যাংকের পরীক্ষা এক সঙ্গে নিচ্ছে। এতে এক আবেদনের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকের পরীক্ষা দেয়া যায়। সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষার খরচের অর্ধেক বহন করে সিলেকশন কমিটি বা বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি অর্ধেক ভাগ করে বহন করে যে প্রতিষ্ঠানের জন্য জনবল নেয়া হবে তারা। এই খরচ দিতে হয় জনবলের চাহিদার ভিত্তিতে।
দেশে বর্তমানে ৫৯টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে। প্রতি বছর এসব ব্যাংকের ৪০০ থেকে ৫০০টি শাখা সম্প্রসারিত হচ্ছে। নতুন শাখা পরিচালনা ও অবসরে যাওয়া শূন্য পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগে বছরব্যাপী জনবল নিয়োগ করে থাকে ব্যাংকগুলো।