ভর্তি ও পাবলিক পরীক্ষার ফল এক সফটওয়্যারে হওয়া উচিত: এন আই খান    - দৈনিকশিক্ষা

ভর্তি ও পাবলিক পরীক্ষার ফল এক সফটওয়্যারে হওয়া উচিত: এন আই খান  

মো: নজরুল ইসলাম খান |

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ফল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বিন্দু কম; জিপিএ-৫ কম পনের হাজার ৭০৮ শিক্ষার্থী। ৭২টি কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি। শতকরা ৩৩ পেলে পাস, পৃথিবীর কোন দেশে ৩৩ নম্বরে পাস? প্রতি বছর প্রায় ৪০ লক্ষ শিশু জন্মে তার মধ্যে এ বছর প্রায় ৮ লক্ষ এইচএসসি পাস করেছে। এইচএসসি পাস করে কী কাজ করতে পারে ? আর যদি মোট শিশুর ৮০ শতাংশ যদি এইচএসসি’র দোরগোড়া পার হতে না পারে তবে কীভাবে আমরা উন্নত দেশ হবো ? ৩ লক্ষ ৬১ হাজার পরীক্ষার্থী ফেল করেছে। মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। বাংলাদেশের অনেক সংসদীয় এলাকার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এটা কী বড় একটা ক্ষতি নয় ?

আত্মীয়-স্বজনকে হিসাব থেকে বাদ দিলেও ফেল করা পরিবারে গড়ে যদি ৫ জন করে সদস্য থাকে তবে ১৮ লক্ষ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। মা-বাবার স্বপ্ন, শিশুর ভবিষ্যত চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে ? একটা অজুহাত হতে পারে সবাই পাস করে না। পড়েনি তাই পাস করেনি ! কে তার জন্য দায়ী ? যারা দায়িত্বে আছেন তারা কী দায়ী না ? কিছু কি করার নেই ? চেষ্টা করলে প্রত্যেককেই কি পাস করানো যেতো না ? উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ। পাস করানো দায়িত্ব ! ভালো করাই স্বাভাবিক ! অকৃতকার্য হওয়া, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনা না করার জন্য হয়েছে। এ কথা সত্য এক’দু বছরে হয়নি, বহু বছরের অবহেলা অবক্ষয়ের জন্য হয়েছে এবং তা পূরণ করা সম্ভব।

কুমিল্লা বোর্ডের ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রায় অর্ধেক অকৃতকার্য। গত দুই বছর যাবত ফলাফল খারাপ হচ্ছে। ফলাফল খারাপ হওয়া না হওয়া বা পরীক্ষা একটি ইনডিকেটর, এখান থেকে বোঝা যায় লেখাপড়া কোন দিকে যাচ্ছে। কম পাস করছে তার অর্থ শিক্ষার মান ভালো এবং সঠিকভাবেই মূল্যায়ন হচ্ছে এই ধারণা কিংবা আত্মতুষ্টি নিতান্ত আহাম্মকি মনে হয়। তাই যখন বলা হয় মূল্যায়নের পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে ফলাফল খারাপ তখন মন মানতে সায় দেয় না। মোদ্দাকথা পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন এনে শিক্ষায় বড় পরিবর্তন আসবে না। হয়তো কী হচ্ছে তা আরো পরিস্কার বোঝা যাবে। উত্তরণের সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করবে। কিন্তু ইপ্সিত পরিবর্তন আনতে হলে শেখা ও শেখানোয় পরিবর্তন আনতে হবে। তা করতে হলে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। ফসল কাটায় মুন্সিয়ানা দেখিয়ে ফসল উৎপাদন কত আর বাড়ানো যায় ? ফসল ফলানোয় মনোযোগ দেয়া দরকার। তার কিছু উল্লেখ করছি:-

১. কলেজ পর্যায়ে কনটাক্ট আওয়ার খুব কম; কনটাক্ট আওয়ার বাড়াতে হবে। বাস্তবে কনটাক্ট আওয়ার কত তা কেউই বলতে পারে না। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর বা অন্য কোন সংস্থার কোন গবেষণা আছে এমন তথ্য আমার জানা নেই; শিক্ষাবিদদের বলতে শুনিনি; লেখা দেখিনি। দৈনিকশিক্ষার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খানের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝেছি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ২৪ মাসের সময়ের মধ্যে ১৮ মাসের বেশি পড়াশোনার জন্য পাওয়া যায় না। এই ১৮ মাস সময়ের মধ্যে ছুটি আছে; প্রতিদিন কত ঘন্টা কনটাক্ট আওয়ার তা আমার কাছে খুব কম বলে মনে হয়। অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতি চালু করে পরীক্ষার ফলাফল ও ক্লাস শুরু করার মধ্যের সময় অনেক কমিয়ে আনা গেছে। আমার চালু করা পদ্ধতি পূর্ণ ও উন্নত করা হয়েছে। তারপরও আরোও সময় কমানোর সুযোগ আছে। আমি মনে করি বর্তমান ভর্তির সফটওয়ার পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার সফটওয়ারের সাথে একীভূত করা দরকার। এইচএসসি পরীক্ষার পর কে কোন কলেজে ভর্তি হতে চায় সেই অপশন নেয়া যায়। ইতোমধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়া হতে পারে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সাথে (অকৃতকার্যদের বাদ দিয়ে) কলেজ প্লেসমেন্ট দেয়া যায়। পরবর্তী কয়েক দিন শুধু কলেজ পরিবর্তনের জন্য ব্যয় হবে। এতে অনেক সময় বাঁচবে। সেই সময় শেখা শেখানোর জন্য ব্যয় করা যায় ।

২. একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষা ডিসেম্বর মাসে নিতে হবে। দীর্ঘ সময়ব্যাপী পরীক্ষা নেয়ার কালচার পরিবর্তন করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরের সময় প্রকাশ করা হলে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি থাকবে বিধায় আন্দোলন হবে না। তারপরও দূর্যোগ, রাজনৈতিক ডামাডোল থাকবেই।

৩. পরিদর্শনে দেখেছি এবং সবাই অকপটে স্বীকার করেন ১২টার পর শিক্ষার্থীদের কলেজে পাওয়া না যাওয়া সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এই সংস্কৃতির কারণগুলো বের করতে হবে। একমাত্র কারণ জানা গেলেই তবে তা শুধরানো সম্ভব। জনপ্রিয়তা বজায় রাখার জন্য কেউই কাউকে বেজার করতে চায় না। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এই বিশ্বাস কাজে লাগে না। এতে সমালোচিত হতে হয়, জনপ্রিয়তা হারাতে হ্য় কিন্তু উত্তরসূরিরা একই পথে চলছে। সামান্য কিছু উদ্ভাবনী কাজের মাধ্যমে আমরা কারণগুলো বের করতে পারি। কারণ বের করা গেলে সমাধান দেয়া যায়।

সারা বছরের কোন দিনে, কোন সময়ে, কোন শিক্ষক, কোন ক্লাস নিবেন; কেউ কোন ক্লাস না নিতে পারলে কে বদলী শিক্ষক হবেন তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি সফটওয়ার ব্যবহার করে কার কী পারফরমেন্স তা সহজে দেখা যাবে। সেখান থেকে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ওপেন হওয়ার কারণে সবাই সতর্ক হবেন।

৪.বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক ক্লাসে উপস্থিতি কম: এবিষয়ে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন। এখানেও কোন গবেষণা নেই। তবে আমার ধারণা শিক্ষকরা যেভাবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ান তার চেয়ে ইউটিউব বা অন্যান্য মিডিয়াতে আরো আকর্ষনীয় ও অল্প সময়ে সহজবোধ্য। তাহলে কেন তারা আকর্ষণবিহীন ক্লাসে, অতিরিক্ত সময় নষ্ট করবেন ? প্রতিটি বিজ্ঞান শিক্ষককে এই সব কনটেন্ট ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করতে বাধ্য করতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে উৎসাহিত করতে হবে। কে দেখভাল করবে ? কথায় খৈ ফুটালে হবে না। শেষতক ধরা পড়তে হবে!

৫. বড় বড় কলেজে একাদশ শ্রেণি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব পেয়ে থাকে। অনার্স-মাস্টার্সের ক্লাস নেয়া সম্মানের। বড় বড় কলেজগুলো অনার্স নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এদিকে নজর কম। সিলেবাস শেষ করে না। সাজেশনভিত্তিক লেখাপড়া। লেখাপড়া আজকাল শুধু জ্ঞানার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। জীবনের জন্য প্রস্তুতি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে হলে পরীক্ষার খাতা দেখায় পরিবর্তন আনা যথেষ্ট না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন: “পাসের হার নয়, মানুষ হতে হবে।”

 

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069000720977783