ভুল তথ্যে কাজ বন্ধ ঢাবির ‘অত্যাধুনিক’ ছাপাখানায় - দৈনিকশিক্ষা

ভুল তথ্যে কাজ বন্ধ ঢাবির ‘অত্যাধুনিক’ ছাপাখানায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা, জার্নাল মুদ্রণে অত্যাধুনিক ছাপাখানা থাকলেও কাজে লাগানো হচ্ছে না তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপার কাজ করা হচ্ছে বাইরের প্রেস থেকে। বেকার পড়ে রয়েছে প্রেসটি। বাইরের প্রেসে মুদ্রণের কাজ করায় কমিশনে পকেট ভারী হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এছাড়াও মেশিন অপারেটরের জায়গায় নিয়োগ করা হয়েছে মেকানিক। রোববার (২১ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম রবিন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, বহু বছরের চেষ্টায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকায় জাপানের তৈরি ‘সাকুরাই’ ব্র্যান্ডের একটি নতুন অফসেট মেশিন কেনা হয়। মেশিনটি পরিচালনায় কেনা হয় কম্পিউটারসহ যাবতীয় সরঞ্জাম। নিয়োগ দেয়া হয় লোকবল। কস্পিউটার নিয়ন্ত্রিত উচ্চ ক্ষমতার এ প্রেসে রঙিন, সাদাকালোসহ যাবতীয় ছাপার কাজ করা যায়। কিন্তু দুই বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজ হয়নি এ প্রেসে।

পাবলিক রিলেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসিক পত্রিকা, বার্ষিক রিপোর্ট বই, বিভিন্ন জার্নাল, বাজেট বই, ডায়েরি, বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেসে না ছাপিয়ে বাইরে ছাপানো হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নও ছাপানো হয় বাইরের প্রেস থেকে। কয়েক বছর ধরে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলেও তা বন্ধ হয়নি।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে ডিমাই সাইজের সিঙ্গেল কালার অফসেট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস, হল, হোস্টেল, অনুষদ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিজস্ব প্রেস থেকে ছাপাতে নির্দেশ দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে এক কালার ছাপা যায়, রঙিন আমন্ত্রণপত্র ছাপা যায় না, এ যুক্তি দেখিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে রঙিন সব ধরনের ছাপার কাজ করা সম্ভব। মেশিনের সক্ষমতা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে।

মেশিন সরবরাহকারী কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণালয় বিভাগের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাপার কাজ নিজস্ব প্রেসে সম্ভব। মেশিন সরবরাহকারী জেএমই লিমিটেডের এজিএম ইঞ্জিনিয়ার মো. ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, ‘সব কিছুই ছাপানো যায়। এতে পত্রিকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা ছেপে গুণগত মান নিশ্চিত করে ক্রয় কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে।’

নতুন মেশিন পরিচালনায় একজন মেশিনম্যানকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি আদতে মেশিন মেকানিক, অপারেটর নন। তিনি আগে সরবরাহকৃত মেশিনের কোম্পানিতে অর্থাৎ জেএমই লিমিটেডের মেশিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি মেশিনে ছাপার কাজ করতে মোটেও পারদর্শী নন। তার কাজ মেশিন মেরামত। কিন্তু তাকে দিয়ে বাঁধাই শাখায় খাতা তৈরির কাজ করানো হয়। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটরের জন্য নিয়োগকৃত তিনজনের দুইজনকে দিয়ে পুরোনো পদ্ধতির সিসার টাইপের কম্পোজের কাজ করানো হচ্ছে। একজনকে দিয়ে স্টোর শাখায় নন-টেকনিক্যাল কাজ করানো হচ্ছে। আর ছাপার কাজের জন্য কেনা কম্পিউটারগুলোর একটির মনিটর খুলে এনে সিসি ক্যামেরার মনিটরের কাজে বসানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এবং মেশিন ক্রয় কমিটির প্রধান জীবন কুমার মিশ্র বলেন, ‘মেশিনটি এক কালারের হলেও এর দ্বারা অন্য কাজও করা যায়। এক কালার করে চারবার চার কালার দিয়ে চার কালারের কাজ করা সম্ভব। গ্রাফিক্স ডিজাইন, নেমপ্লেট, লোকবলসহ পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট থাকলে মাসিক পত্রিকা, জার্নালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ করা যাবে এটা দিয়ে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণালয় বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বাইরে থেকে ছাপার কাজ করা হয় কিছু লোকের স্বার্থে। এতে প্রেস বসিয়ে রেখে যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি প্রতিমাসেই নতুন নিয়োগকৃত জনবলের জন্য বেতন বাবদ ও অন্যান্য বাবদ অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০টি জার্নাল ছাপা হয়। বাংলা একাডেমিসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ছাপার মেশিন আছে। তারা নিজেদের ছাপার কাজ নিজস্ব ছাপাখানায় করছে।

তিনি আরও জানান, গত বছর সার্টিফিকেট ছাপার জন্য যেসব টাইপ কেনা হয়েছে তার মধ্যে ৪৮ পয়েন্ট টাইপটিও ক্রয় করা হয়েছে। এ টাইপটি পাকিস্তানে তৈরি। সে কারণে পূর্বের টাইপের ফেসের সঙ্গে এই টাইপটা একটু মোটা এবং এক ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা। এতে সার্টিফিকেট ছাপালে আগে ছাপা সার্টিফিকেটের ফন্টের সঙ্গে অমিল দেখা দেবে। এতে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার ও উপপরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, ‘পরীক্ষা সংক্রান্ত যত কাজ আছে তা নিজস্ব প্রেসে করা হয়। কালারিং কাজগুলো বাইরে থেকে করানো হয়। কালারিং কাজ করার মতো মেশিন ও জনবল নেই।’

নতুন কেনা মেশিন সরবরাহের সময় পত্রিকা ও অন্যান্য প্রকাশনা মুদ্রণ করে পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কিছু তার জানা নেই। তিনি বলেন, আমাদের যে মেশিন ও জনবল আছে তা দিয়ে পত্রিকা, বার্ষিক রিপোর্ট বই, বিভিন্ন জার্নাল, বাজেট বই, ডায়েরি, বার্ষিক ক্যালেন্ডার ছাপানো সম্ভব নয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে সব কাজ করা যায় না। তবে যা প্রয়োজন তার অনেকটা করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস এখন আর আগের মতো নেই। অনেক কাজ হচ্ছে এখন। এটা দীর্ঘদিনের একটা জট। ধীরে ধীরে উন্নতি করে নিজস্ব প্রেসে যাবতীয় কাজ করা হবে। উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানাও হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068609714508057