ফেনী সোনাগাজীতে ভূমি বিরোধের জেরে চার মাস থমকে আছে উত্তর চরছান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী ফোরকান চৌধুরী। তিনি বলেন, বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য যে ভূমি নির্দিষ্ট করা রয়েছে, তার মধ্যে দুই শতক ভূমি দুই-তিন জন ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে বাধা দেওয়ায় নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) রহীমা খোন্দকার বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি কক্ষের প্রয়োজন হলেও রয়েছে তিনটি। কক্ষগুলোর দরজা-জানালা সবই ভাঙা। এমনকি ওপরের টিনও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পড়ায় মাল্টিমিডিয়া ও প্রাক প্রাথমিকের সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে সরকারি এসব সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে, শ্রেণিকক্ষের অভাবে সেগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আগামী বর্ষার আগে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করা না হলে এসব মূল্যবান জিনিসপত্র ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বিদ্যালয়ের নামে ৩০ শতক ভূমি রেজিস্ট্রি করা থাকলেও দখলে রয়েছে ২৫ শতক। পাঁচ শতক ভূমি স্থানীয় বড় বাড়ির বাসিন্দা নূর হোসেন হিরন, মোহাম্মদ লিটন ও হেদায়েত উল্যাহ দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে। চার মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মান কাজ শুরু করতে গেলে দখলদাররা বাধা দেওয়ায় নির্মাণ কাজ থমকে যায়। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও কোনো সমাধান মেলেনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নূর হোসেন হিরন বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় তার দাদা জাফর উল্যাহ চৌধুরী ৩০ শতক ভূমি দান করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে ৩১ শতক ভূমি। ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমের জন্য যে ভবন নির্মাণ করা হয়, সেটি কয়েক মাস আগে ভেঙে আমাদের দখলীয় পৈতৃক ও ওয়ারিশি ভূমিতে নতুন ভবন নির্মাণের চেষ্টা করলে আমরা বাধা দিই। বিদ্যালয়ের নামে যে ভূমি রয়েছে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণে আমাদের কোন বাধা নেই। তবে আমাদের ভূমিতে আমরা নির্মাণ কাজ সম্প্রসারণ করতে দেব না।
সোনাগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন আক্তার বলেন, তিনি যোগদানের পর কোনো লিখিত আিভযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ হিটলারুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সোহেল পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অতিদ্রুত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।