ফেসবুক ভুয়া আইডি খুলে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রীদের বের করে দিচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীদের মুঠোফোন চেক করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া মাত্রই বের করে দেয়া হয় ৩ ছাত্রীকে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা। ছাত্রীদের বের করে দেয়ার বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা নিজেই বৃহস্পতিবার দিবাগত সাংবাদিকেদর এ কথা জানান।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান হয়রানির অভিযোগটিকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত কমিটি হয়েছে, তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ তো করতেই পারে।”
সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমন তিনজন ছাত্রীর পরিচয় জানতে পেরেছেন সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে সাংবাদিকদের সামনেই একজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রীর বাবা ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে দ্রুতবেগে চলে যান। সেসময় তিনি কথা বলতে চাননি। এরপর রাত ১২টা ৪০মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপরই ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আন্দোলনের কারণে মেয়ে রাতেও হল থেকে বের হন। এসব বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেছেন, দুই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে ছাত্রীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেছেন, রাতে আটজনকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের ফ্লোরে ফ্লোরে রাতে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। ছাত্রীরা আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বলছেন, মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রথম চোটে তাদের বিচার করছে হল প্রশাসন।
সুফিয়া কামাল হলের সামনে গভীর রাতে বিক্ষোভ:
রাতের আঁধারে কয়েক ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় হলটির সামনে বিক্ষোভ করছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে অন্তত ২০-৩০ জন হলটির সামনে জড়ো হয়ে হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেন। এদিকে, ছাত্রীদের রাতের আঁধারে বের করে দিয়ে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করে হলটির সামনে রাত দেড়টার দিকে অবস্থান নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গঠিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনও তদন্ত ছাড়াই হলের ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসনের কাছে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সেই ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা শুক্রবার সকালে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করব। একইসঙ্গে আমরা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’
পরে রাত আড়াইটার দিকে ওই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরু জানান, ছাত্রীদের এভাবে হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৪টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।
ছাত্রীেদর হল থেকে বের করে দেওয়ার খবর ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে রাত দেড়টার কিছু পরে হলটির সামনে আসেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরু। এরপর একে একে ওই আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হয়। তারা ফেসবুকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে সবাইকে হলটির সামনে আসার আহ্বান জানান। ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা হলের সামনে মিছিল করেন। ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘রাতের আঁধারে আমার বোন বাইরে কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।
বাইরে এ মিছিলের সময় হলের বিভিন্ন ভবনের ছাত্রীরা জানলা দিয়ে হাত নেড়ে তাদের স্বাগত জানান।