বাবা ফুটপাতে চায়ের দোকানদার। দেড় শতকের ভিটা-বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁর। মা কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। সেই মা-বাবার লড়াকু মেয়ে শ্রাবন্তী সাধু এবার যশোর বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অভাব-অনটন আর দুঃখ-কষ্টের ভেতর চলতে থাকা পরিবারটিতে এখন তাই আনন্দের জোয়ার।
যশোরের মণিরাম উপজেলার হানুয়ার গ্রামের হতদরিদ্র তপন সাধু ও বাসনা সাধুর তিন সন্তানের মধ্যে শ্রাবন্তী বড়। রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
জেএসসি ও এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল শ্রাবন্তী। পরিবারের শত দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তি তাকে লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তার প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানে সব বাধা।
প্রতিবেশীর ছেলে-মেয়েদের পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ কিছুটা পুষিয়ে নেয় শ্রাবন্তী। পড়ালেখার প্রতি মেয়ের প্রবল আগ্রহ দেখে তার খরচ জোগাতে আর সংসারে সাহায্য করতে মা বাসনা সাধু অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) ফলাফল শুনে কেঁদে ফেলেন শ্রাবন্তী। আনন্দের অশ্রু মুছে বলে, ‘আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।’
কিন্তু উচ্চাশিক্ষার খরচ কিভাবে জোগাব তা মাথায় আসছে না। মা-বাবার টানাটানির সংসারে আমি আরেক বোঝা। ভবিষ্যতে আমি তাদের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে চাই।’
শ্রাবন্তীর বাবা তপন সাধু বলেন, ‘মেয়ের রেজাল্টে আমি বেজায় খুশি, কিন্তু মেয়ের কাছে আজ আমার লজ্জা করছে। কারণ অভাবের কারণে আমার শ্রাবন্তীকে অন্যদের মতো ভালোভাবে পড়ালেখার খরচ দিতে পারিনি, ভালো পোশাক-আশাক পরতে দিতে পারিনি, পারিনি দুই বেলা দুই মুঠো ভালোভাবে খেতে দিতে।
শ্রাবন্তীর প্রতিবেশী অধ্যাপক জাকাত আলী বলেন, ‘শ্রাবন্তীর ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে দরিদ্রতা। একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর মধ্যে যেসব গুণ থাকা দরকার, তার সব কটিই আছে তার মধ্যে।’
কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে যে সব কিছু অর্জন করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো শ্রাবন্তী।
তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারলে সে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
ওসি আরো বলেছেন,খবর পেয়ে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।