রাজধানীর মাদরাসা-ই আলিয়ার মাঠ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এ কারণে অযত্ন-অবহেলায় পড়েছে এ মাঠ। এ সুযোগে স্থানীয় কেউ কেউ নিজেদের সুবিধায় এই মাঠ ব্যবহার করছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, মাদরাসার মাঠের ভেতর ধোপাদের কাপড় শুকানোর দৃশ্য। এ সম্পর্কে কথা হয় গোবিন্দ ধোপার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা তো পুরো মাঠ দখল করিনি। একপাশে কাপড় শুকাচ্ছি।’
কাপড় শুকানোর জন্য কারও অনুমতি নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে গোবিন্দ ধোপা বলেন, ‘ মাদরাসার হুজুরদের বলেছি। ছাত্রনেতা আছে কয়েকজন। তারাও বলেছেন, তোমরা কাপড় শুকাতে দাও। কোনো সমস্যা নেই। আমরা গরিব মানুষ দাদা। আমাদের সবাই মায়া করে।’ মাঠের পরিবেশ ভয়াবহ রকম অপরিচ্ছন্ন বলে অভিযোগ জানিয়েছে মাঠে খেলতে আসা শিক্ষার্থীরা।
পুরো মাঠে বড় বড় ঘাসের কারণে খেলাধুলা করতে বেশ সমস্যা হয়। তা ছাড়া মাঠের কোনো নিজস্ব টয়লেট নেই। দুটো টয়লেট আছে। মাদরাসা-ই আলিয়ার মাঠে যখন বিশেষ আদালত বসে, তখন টয়লেটগুলো খুলে দেয়া হয়। অন্য সময় বন্ধ থাকে। মাদরাসা-ই আলিয়ার মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল হক বলেন, সত্যি বলতে এখানে খেলার কোনো পরিবেশ নেই। তারপরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় নোংরা পরিবেশেই খেলতে হচ্ছে। পুরো মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের চারদিক ময়লা-আবর্জনা ও আগাছায় পূর্ণ। বেশ কয়েক বছর হলো মাঠ সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে হাত দেয়া হয়নি। জানা গেছে, সরকারি মাদরাসাই আলিয়ার মাঠ নিয়ে মাদরাসা ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলার কারণেই মাঠ সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো যাচ্ছে না।
এমনকি মাঠের নিরপত্তাকর্মীও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন সকালে দু’জন পুলিশ মাঠে আসেন। মাঠ ও অস্থায়ী বিশেষ আদালতের নিরাপত্তায় তারা সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠেই অবস্থান করেন। যাওয়ার সময় তারাই মাঠের গেট বন্ধ করে যান। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, মাদরাসা-ই আলিয়ার নামে ব্যবহৃত মাঠটি কেন্দ্রীয় কারাগারের নিজস্ব সম্পদ। এ মাঠ ব্যবহারের অধিকার মাদরাসা-ই আলিয়ার নেই। এ সম্পর্কে মাদরাসা-ই আলিয়ার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রশিদ বলেন, মাদরাসার মাঠ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে।
মাঠটি প্রথমে কারাগারের মাঠই ছিল। তখনও এখানে মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভারত ভাগের পর কলকাতা আলিয়া যখন ঢাকায় স্থানান্তরিত হল, তৎকালীন সরকার কারাগারের মাঠটি কাগজে-কলমে মাদরাসা-ই আলিয়াকে লিখে দেয়। উপাধ্যক্ষ আবদুর রশিদ আরও বলেন, ১৯৫৮ থেকে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের আগ পর্যন্ত এ মাঠ মাদরাসা-ই আলিয়ার মাঠ হিসেবেই ব্যবহার হয়ে আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করে এটি তাদের মাঠ। মাঠ নিয়ে এখনও মামলা চলছে। তবে এর রায় কবে হবে আল্লাহই ভালো জানে। মাদরাসা-ই আলিয়ার মাঠটি এখনও ছাত্রদের খেলাধুলার জন্যই ব্যবহার হচ্ছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জামাতও এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সুত্র : দৈনিক যুগান্তর